করিমপুরে তৃণমূলের মিছিলে বিমলেন্দু সিংহ রায় ও মহুয়া মৈত্র। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য নেতৃত্বের কড়া বার্তার জেরে অবশেষে করিমপুরে এক সঙ্গে মিছিল করলেন তৃণমূলের বিবদমান দুই শিবিরের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ দিন বাদে পাশাপাশি মিছিলে দেখা গেল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ও বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়কে। কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকে করিমপুর থেকে সরে থাকতে বলে মুর্শিদাবাদের সাংসদ (করিমপুর ওই সংসদের মধ্যেই পড়ে) আবু তাহের খানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেও যে মহুয়া করিমপুরের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক আছেন, তা সোমবার স্পষ্ট হয়ে গেল বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা। এ দিনের ‘ঐক্যের মহামিছিলে’ কোন পক্ষের বেশি ফায়দা হল, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, করিমপুরের প্রাক্তন বিধায়ক মহুয়া সাংসদ হওয়ার পরে বিমলেন্দু তাঁর জায়গায় জিতে আসা ইস্তক দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। সম্প্রতি অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ নিয়ে তা ফের প্রকাশ্যে আসে। তাতে কার্যত জড়িয়ে যান দলের উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি কল্লোল খাঁও। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১০ ডিসেম্বর তাঁর ভবানীপুরের অফিসে দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। সেখানে দুই পক্ষকেই জানিয়ে দেওয়া হয়, যে কোনও মূল্যে পঞ্চায়েত ভোটের আগে মিলে-মিশে চলতে হবে। গোষ্ঠী-বিবাদ মেটাতে এবং দুই শিবিরের কর্মীদের কাছে সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিতে এক সঙ্গে পদযাত্রা করতে হবে বলেও ঠিক করে দেওয়া হয়। এ দিন করিমপুর ১ ব্লকের মিছিল হয় ফার্মের মোড় থেকে নতিডাঙা মোড় পর্যন্ত। করিমপুর ২ ব্লকের মিছিল নতিডাঙা হাইস্কুল সংলগ্ন ময়দান থেকে গমাখালি গ্রাম পর্যন্ত যায়। দুটি মিছিলেই বিধায়ক ও সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন দলের করিমপুর ১ ব্লক সভাপতি আশিসকুমার চট্টোপাধ্যায় ও করিমপুর ২ সভাপতি রেজাউল হক হালসানা।
ঐক্যের মহামিছিল করে সত্যিই কতটা বিরোধ ঘুচবে, তা নিয়ে অবশ্য দুই শিবিরেই যছেষ্ট সন্দেহ আছে। এ দিন মিছিলে যোগ দেওয়া অনেক কর্মীর মতে, দু’পক্ষের লোকজন পাশাপাসি হাঁটলেও নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা তেমন কিছু হয়নি। তবে বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায়ের দাবি, “কিছু বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে মতান্তর ছিল ঠিকই, তবে মনান্তর ছিল না। যেটুকু বিরোধ ছিল, এ দিনের মহামিছিলের মধ্যে দিয়ে তা মিটে গিয়েছে।" বিধায়ক বিরোধী-শিবিরের লোক বলে পরিচিত, করিমপুর ১ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি তরুণ সাহাও দাবি করেন, “বড় পরিবারে অনেক সময়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ হয়, ফের মিটেও যায়। সেই রকমই কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন আমরা সবাই আবার এক!”