তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমান
টেবিলের উপরে আঙুলের টোকা দিয়ে সটান ঘোষণা হল— ‘লিড দিতে হবে অন্তত ২০০ ভোটের। তা হলে, সর্বোচ্চ যে লিড দেবে তাকে দিদির সই করা শংসাপত্র দেওয়া হবে। বুঝেছেন।’
যিনি বলছেন, তাঁর নাম ইমানি বিশ্বাস। বছর তিনেক আগেও কংগ্রেসের অপরিহার্য সেনাপতি। এখন তৃণমূলের।
পরিচয়টা এখানেই শেষ নয়। এ বার দলের প্রার্থী তালিকায় কানাঘুষো তাঁর নামওটাও বার বার উঠতে শুরু করেছিল, বাধ সাধল.....। নাহ, সরাসরি বলা ঠিক হবে না। বরং বলা ভাল, দলের অন্দরের খবর— জঙ্গিপুরের জবরদস্ত গোষ্ঠী কোঁদল থামাতে তিন পক্ষের কাউকেই বেছে না নেওয়ায় কোপ পড়েছে ইমানির উপরে। প্রার্থী হয়েছেন এলাকায় পরিচিত বিড়ি মালিক খলিলুর রহমান।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দলের ভেতরের খবর, তা নিয়ে দলের অনেকেরই মুখ গোমরা দেখে পরিবহণমন্ত্রী তথা জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, ‘‘কোনও কোন্দল আর শুনব না, প্রার্থী হারলে সব হিসেব
বুঝে নেব।’’
আর তাই, সব গোষ্ঠীর নেতাদেরই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, ‘লিড দিতে হবে প্রত্যেককে, অন্তত ২০০ ভোটের।’ ইমানিও তাই বিবাদ ভুলে সেই কথাই ভাঙা রেকর্ডের মতো শোনাচ্ছেন দলীয় কর্মীদের।
জঙ্গিপুরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে প্রার্থী খলিলুর রহমানের পরিচয় করাতে সোমবার রঘুনাথগঞ্জ রবীন্দ্রভবনে গ্রাম ও ব্লক স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে দলের দুই নেতার স্পষ্ট নির্দেশ এটাই। আর এর জন্য পঞ্চায়েত ভোটের স্টাইলেই যে তারা হাঁটতে চান তা স্পষ্ট করে দিলেন দলের নেতারা।
এ দিনই দলের পক্ষ থেকে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পরিচালনা নিয়ে যে স্টিয়ারিং কমিটি ঘোষিত হয়েছে দুই বিড়ি মালিক জাকির হয়েছেন তার চেয়ারম্যান এবং ইমানিকে করা হয়েছে তার যুগ্ম আহ্বায়ক। কমিটির অন্য আহ্বায়ক হয়েছে দলের জঙ্গিপুর মহকুমার সভাপতি বিকাশ নন্দ।
এ দিনের সভার মঞ্চে প্রার্থী খলিলুর ছাড়াও ছিলেন জঙ্গিপুর লোকসভা এলাকার তিন দলত্যাগী বিধায়ক আশিস মার্জিত, কানাই মণ্ডল, আখরুজ্জামান, লালবাগের মহকুমা সভাপতি রাজীব হোসেন।
প্রথমেই বলতে উঠে সভার সুর চড়িয়ে দেন তৃণমূলের সহ-সভাপতি অশোক দাস। তার নির্দেশ, “যে কোনও মূল্যে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে এ বার হারাতে হবে। আর সে দায়িত্ব নিতে হবে জাকির, ইমানি ও বিকাশের নেতৃত্বে সকলকে।’’
মন্ত্রী জাকির বলেন, “তার জন্য সকলকে মিলেমিশে কাজ করা দরকার। মনের মধ্যে যাই থাক না কেন, কাজ করতে হবে ভেদাভেদ ভুলে, এক সঙ্গে।”
সেই সুরটাই বেঁধে দিলেন ইমানি— “জঙ্গিপুরে ৮৪টি পঞ্চায়েতে ১৭৬০টি বুথ। প্রতিটি বুথে ২০০ করে লিড চাই। কোনও কথা শুনতে চাই না। সব থেকে বেশি যিনি লিড দেবেন দিদির সই করা শংসাপত্র পাবেন তিনি।” তবে, লালবাগের মহকুমা সভাপতি রাজীব হোসেনের কথায় সেই পুরনো ভয় খুঁজে পেয়েছেন কর্মীরা।— “যে ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন করা হয়েছে তার চেয়েও কঠোর ভাবে এ বারের ভোট করতে হবে। সুস্থ ভাবে কথা বলবেন, না শুনলে রাতের অন্ধকারেই হোক বা অন্য ভাবে হোক মানুষকে যে ভাবে বোঝানোর দরকার তা বোঝাতে হবে।”
সঙ্গ মেলান নবগ্রামের ব্লক সভাপতি এনায়েতুল্লা। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতে সবকে ফিনিশ করেছি। লোকসভাতেও তাই পোলিং ভোটের ৮৩ শতাংশ আসবে আমাদের দখলে এটা নিশ্চিত।” এতটা আশ্বস্ত অবশ্য করতে পারেননি সাগরদিঘির ব্লক সভাপতি নুরজামাল। তাঁর আশ্বাস, ‘‘লিড দেব ১০ হাজার।’’
খড়গ্রামের ব্লক সভাপতি মফিজুদ্দিনের অবশ্য সংযত মন্তব্য করেছেন, “পঞ্চায়েতে যেহেতু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে বসে আছি তাই এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের ক্ষোভের কথা শুনে তাদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা দরকার।” তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, দলের ‘কৃতকর্মের’ জন্য মৃদু হলেও সঙ্কোচ রয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। সেই সুরেই সুতি ১ ব্লকের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের পরামর্শ, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে আগে স্ক্রুটিনি করুন কে কোন দলের ভোটার। তার পর সেই মতো মানুষের মন বুঝে কথা বলুন।” সব শুনেছেন খলিলুর। বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি। সব শেষে বলছেন, ‘‘নেতা ও কর্মীরা মানুষের মন আমার চেয়ে ভাল বোঝেন। যা বলার ওঁরাই বলছেন।’’