ভোট-রোদে বাবুর ছায়া প্রণববাবুই

জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ, এখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। রাজনীতির চাণক্য, এখন সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবু ১৪ বছর পরেও জঙ্গিপুরের লোকসভা নির্বাচনে যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুকে ঘিরে রয়েছেন তিনিই, প্রণব মুখোপাধ্যায়। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৯
Share:

প্রচারে জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

তিনি আছেন জঙ্গিপুর থেকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে। অথচ ভোট এলেই জঙ্গিপুরের হাওয়ায় ভাসতে থাকে তাঁরই নাম।

Advertisement

জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ, এখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। রাজনীতির চাণক্য, এখন সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তবু ১৪ বছর পরেও জঙ্গিপুরের লোকসভা নির্বাচনে যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুকে ঘিরে রয়েছেন তিনিই, প্রণব মুখোপাধ্যায়।

২০০৪ সালে ৩৭ হাজারে জিতিয়েছিল তাঁকে জঙ্গিপুর। ২০০৯ সালে জয় এসেছিল লক্ষাধিক ভোটে।

Advertisement

এক সময় জঙ্গিপুরে তাঁকে কেউ ডেকেছেন ‘দাদা’, কেউ ‘কাকু’। কেউ বা প্রণববাবু বলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন। তারই রেখে যাওয়া জঙ্গিপুরে দু-দু বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরই ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। এক বার আড়াই হাজারে, পরের বার ৮ হাজারের ব্যবধানে জিতে। এ বারও কংগ্রেসের প্রার্থী তিনি।

কিন্তু তফাতটা বিস্তর। বাবার ভোট সঙ্গীরা প্রায় সকলেই একে একে সঙ্গ ছেড়েছেন তাঁর। বিধায়ক আখরুজ্জামান, বিধায়ক আশিস মার্জিত, প্রাক্তন বিধায়ক মহম্মদ সোহরাব থেকে জাকির, মুক্তি, বিকাশের মত নেতা কর্মীরাও। সবাই এখন তৃণমূলের শিবিরে, উঠে পড়ে লেগেছেন অভিজিৎকে হারাতে। দলীয় কর্মীরাই বলছেন, জঙ্গিপুরে অভিজিৎ নামেই প্রার্থী, লড়াইটা বাবার ছায়ার সঙ্গে বিরোদীদের।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের কথায়, “আট বছর জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন প্রণববাবু। ছিলেন প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। অথচ জঙ্গিপুরের মানুষের যে আকাঙ্খা ছিল তা পূরণ হয়নি। একটাও কোনও বড় শিল্প গড়ে ওঠেনি, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি। গড়ে ওঠেনি কোনও কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়। বিড়ি শ্রমিকেরা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। গত দু’বার বাবার ছায়ায় জিতেছেন অভিজিৎ। তাই সাফল্য ও ব্যর্থতায় প্রচারে বার বার উঠে আসছে প্রণববাবুর নাম।”

সুতির কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ূন রেজা অবশ্য বলছেন , “বাবার ছায়া তো ছেলেকে ঘিরে থাকবেই। সুতিতে আমার বড় পরিচয় আমি হাজী লুতফল হকের ছেলে। তার রাজনৈতিক সাফল্যই তো আমাকেও ঘিরে রেখেছে। অভিজিৎও তাই।”

তার কথায়, ‘‘প্রণববাবু দেশের নীতি নির্ধারক ছিলেন। তার মাঝে যখনই সুযোগ পেয়েছেন জঙ্গিপুরের কথা ভেবেছেন। তার মনপ্রাণ জুড়ে ছিল জঙ্গিপুর । তিনি বলতেন জঙ্গিপুর আমাকে সাংসদ হিসেবে জিতিয়ে যে সম্মান দিয়েছে তা কখনও ভোলা যায় না।’’

সুতির ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাসও বলছেন, “লোকসভা নির্বাচন এলে আমরা চাই বা না চাই প্রণববাবুর কথা আসবেই। একটা মহীরূহকে কখনও বাদ দেওয়া যায়! তারই জবাব দিতে হচ্ছে অভিজিৎকে।’’

কংগ্রেসের হিসেব বলছে, প্রণববাবু ছিলেন বলেই সুতির দু-দুটো রাস্তা পাকা হয়েছে। ১৭ কিলোমিটার কেবি রোডের শিলান্যাস হয়েছিল ৪৪ বছর আগে, প্রণববাবু সাংসদ হয়ে এসেই ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে ওই সড়ক নির্মাণ করিয়েছেন। তাদের দাবি, ভোট এলে পূর্বসুরীদের কাজকর্ম নিয়ে এই তুলনা তো চলবেই।

জঙ্গিপুরে প্রথম নির্বাচনে প্রণববাবু যাঁর বাড়িতে ছিলেন সেই মুক্তিপ্রসাদ ধর এখন তৃণমুলের রঘুনাথগঞ্জের ব্লক সভাপতি। মুক্তিবাবু এখনও ‘প্রণবদার’ ছায়ায় ষোলআনা আচ্ছন্ন! প্রণববাবু তখন যে ঘরে থাকতেন এখনও সেখানে সযত্নে আলমারিতে সাজানো আছে প্রণববাবুর রেখে যাওয়া চারটি বিগ্রহ। সেই সোফা, সেই খাট। দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে প্রণববাবুর একাধিক ছবি। তাঁর কথায়, “প্রথমবার ২০০৪ সালে সে ভাবে নিরাপত্তার কড়াকড়িও ছিল না তাঁকে ঘিরে। এলাকার বহু দলীয় বা বিরোধী ছোটো খাটো নেতাকেও তিনি মুখ দেখে চিনতেন। অনেকে তাঁর দ্বারা উপকৃতও হয়েছেন নানাভাবে।’’

আবার ক্ষোভও আছে—অত ক্ষমতাশালী ব্যক্তির প্রভাব তো কম ছিল না, বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য এলাকায় কোনও শিল্প, জঙ্গিপুরে এইমস ধাঁচে একটা হাসপাতাল গড়া কি খুব কঠিন কাজ ছিল তাঁর পক্ষে। প্রশ্নগুলো এখনও সামাল দিতে হচ্ছে অভিজিৎকে।

অভিজিত অবশ্য বাবার ছায়াকে অস্বীকার করছেন না। তবে তাঁর কথা, “বাবার সঙ্গে আমার কথা হয় প্রায় প্রতি দিনই। তবে রাজনীতি নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না আর। তাঁর পরামর্শ, “যত বেশি পার লোকের সঙ্গে মেশো, কথা বল। ওটাই মেনে চলার চেষ্টা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement