চায়ে পে চর্চা: অন্য জেলায় ভোট হলেও ছুটির দিন সবাই তার আঁচ পোহাতে জড়ো আড্ডার ঠেকে। রবিবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
সকাল সকাল বিছানা ছেড়েই বসে পড়বেন টিভির সামনে। রবিবারের বাজারে এমনই প্ল্যান ছিল অমিতাভ মিত্রের। বাধ সাধলেন হোম মিনিস্টার। সকালের চা হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্ত্রী শুক্লা মনে করিয়ে দিলেন— আটটার মধ্যে বাজার কমপ্লিট করতে হবে।
এত ক্ষণে সম্বিত ফিরল অমিতাভের। শনিবার স্ত্রী আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছিলেন এ দিন বাড়িতে শালা, শালার বউ এবং তাদের ছেলেপুলেরা খাবে। আটটার মধ্যে বাজার সেরে ফেলতে হবে। সে সব বেমালুম ভুলে গিয়ে সাতসকালে কর্তাকে টিভিমুখো হতে দেখেই তেড়ে আসেন শুক্লা। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাজারের ব্যাগ হাতে পথে নামতে হয় শান্তিপুরের বাসিন্দা অমিতাভকে। ততক্ষণে সংবাদমাধ্যমের চ্যানেল জুড়ে যাদবপুর।
এ যদি হয় রবিবার সকালের ছবি, তবে শনিবার রাতেও ভোট দেখার প্রস্তুতি কিছু কম ছিল না। রাত তখন এগারোটা প্রায়। নবদ্বীপের পোড়ামাতলার এক মনোহারী দোকান বন্ধ হওয়ার মুখে প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির হলেন এক ক্রেতা। একজোড়া রিমোটের সরু ব্যাটারি চাই। দোকানদারের কৌতূহলের জবাবে জানালেন, টিভির রিমোটটা একটু কমজোরি হয়ে পড়েছে। কাল সকালে এ চ্যানেল, ও চ্যানেল করতে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য আগে-ভাগে ব্যবস্থা নিয়ে রাখলেন। কলকাতার ভোট বলে কথা। সকাল থেকেই উত্তেজনা থাকবে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
অনেকটা কলকাতার দুর্গাপুজো দেখার ঢঙেই রবিবার দিনভর কলকাতার ভোট নিয়ে মেতে রইলেন জেলার মানুষ। রসিকজনের কথায়, এ দিন ছিল ভোট সপ্তমী। দেড় মাস ধরে চলা ভোট উৎসবের শেষ দিনে সকলের নজর থাকল কলকাতার উপর। প্রায় আটত্রিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ঝলসে যাওয়া নদিয়ার মানুষজন রবিবার ভোটের সম্প্রচার দেখেই কাটালেন। কেউ নজর রাখলে যাদবপুরে, তো কেউ ডায়মন্ডহারবারে। কারও নজর আটকে থাকল দমদমে। কেউ ব্যস্ত ভাটপাড়ার উপনির্বাচন নিয়ে।
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা শিবনাথ ভদ্র সপ্তাহে পাঁচ দিন কলকাতা-কৃষ্ণনগর করেন। কলেজ স্ট্রিটে প্রকাশনার কারবার। রবিবার দিনভর টিভি দেখেছেন আর ফোন করেছেন তাঁর কলকাতার পরিচিতদের।
প্রশ্ন একটাই। অবস্থা কেমন, সোমবার কলকাতা যেতে পারবেন তো? তিনি নজর রেখেছিলেন মূলত ভাটপাড়ায়।
কিন্তু কেন? জবাবে শিবনাথ বলেন, “আমাদের যাওয়ার পথে কাঁকিনাড়া স্টেশন। যদি তেমন কোনও গোলমাল হয়, হয়তো কাল অবরোধ হয়ে গেল। সেজেগুজে পথে বেরিয়ে দেখলাম মাঝপথে গাড়ি বন্ধ। তাই আগেভাগে সতর্ক থাকা। আবার যে কলেজ স্ট্রিটে আমার কাজ, সেখানকার খবরও রাখতে হচ্ছে।”
সকলে ভোট উপভোগ করছেন ঠিকই। সঙ্গে একটা চাপা উত্তেজনা আর ভয়ও কাজ করছে। তবে এটাও ঠিক, কলকাতার বাসিন্দাদের একটু পাল্টা দেওয়ার সুযোগও করে দিয়েছে এই ভোট সপ্তমী। কলকাতায় নিত্য যাতায়াত রানাঘাটের বাসিন্দা প্রদীপ দত্তের। তাঁর কথায়, “কলকাতার বন্ধুরা খুব আওয়াজ দিত এত দিন। তোমাদের ভোট মানেই গোলমাল। আজ আমিও পাল্টা বলেছি, কী করে রেখেছ শহরটা! আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে মোড়া।”
সকাল থেকে কলকাতার বাসিন্দারা অনেকেই ভোটের কালি লাগানো আঙুলের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন। তা নিয়ে বন্ধুদের নানা মন্তব্যে ভরে উঠছে সমাজ মাধ্যমের দেওয়াল। জেলার বন্ধু তা দেখে কখনও লিখছেন— ‘দুগগা দুগগা’। কারও আবার কিঞ্চিৎ তির্যক মন্তব্য— ‘‘ভোটে কালি আঙুলে সহাস্য ছবি, আমরা কী গণতন্ত্রে নতুন এলাম...’’। দিনভর বাড়ি বসে জমিয়ে কনুই ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে কলকাতার ভোটচর্চা। গরমের রবিবার মন্দ গেল না জেলাবাসীর।
তবে দিনের শেষে বাজার গরম করল এবিপি আনন্দ-এসি নিয়েলসন বুথ ফেরত সমীক্ষা। সম্ভাব্য ফলাফল দেখে জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘এরাই এর আগে বলেছিল কৃষ্ণনগরে ৮ শতাংশ ভোট পাবে। এখন বলছে জিতছে। নিজেরাই নিজেদের ভুল প্রমাণ করছে। নদিয়ার দু’টি আসনেই আমরা জিতব।’’