কৃষ্ণনগরে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে রানাঘাট কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাস, কংগ্রেস প্রার্থী মিনতি বিশ্বাস ও বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ বিশ্বাস (উপরে)। ল্যাপটপে ব্যস্ত কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে (বাঁ দিকে)।
নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর থেকে গণনা পর্যন্ত প্রায় এক মাস সময়। এই সময়টুকু নিজেদের মতো করেই কাটাচ্ছেন কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট লোকসভার প্রার্থীরা। তাঁদের কয়েক জন আবার মজা করে বলছেন, এ অনেকটা পরীক্ষা দেওয়ার পর ফলের অপেক্ষায় মাস পার করার মতো। তারই মধ্যে মঙ্গলবার ভোটগণনা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁদের জেলা প্রশাসনিক ভবনে বিশেষ বৈঠকে ডেকেছিল জেলা প্রশাসন। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের চার প্রার্থীকে সেখানে দেখা না গেলেও এসেছিলেন রানাঘাট কেন্দ্রের চার দলের চার প্রার্থী। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত।
রানাঘাটের তৃণমূল প্রার্থী রূপালী বিশ্বাস ভোটের পর থেকে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন ছেলের সঙ্গেই। ছেলেকে খাওয়ানো, স্নান করানো থেকে শুরু করে তাঁর খেলার সঙ্গী হওয়া। এর ফাঁকে, রান্নাবান্নাতেও হাত লাগাচ্ছেন। বিকেলে ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। মাকে দীর্ঘ দিন সে ভাবে কাছে পায়নি ছেলে। তার নানা আবদার মেটাতে হচ্ছে রূপালীকে। ভোটের ফল নিয়ে আলাদা কোনও টেনশন তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন।
সিপিএমের রমা বিশ্বাস ব্যস্ত রয়েছেন দলের নানা সাংগঠনিক কাজ নিয়ে। অন্য জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচারও করছেন। গনণাকেন্দ্রে দলের এজেন্ট ঠিক করা, এজেন্ট-ফর্ম সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ রয়ে গিয়েছে। অবসরে মেতে আছেন বাগান আর ফুলগাছ নিয়ে। ফল নিয়ে অবশ্য টেনশন নেই।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রানাঘাটের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার ফুলিয়া বিদ্যামন্দির স্কুলের শিক্ষক। এখন স্কুল ছুটি। তাই স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই। তিনি সাংগঠনিক কাজ দেখছেন। প্রচারে গিয়েছেন মেদিনীপুরে। ভোটের ফল নিয়ে ভাবতে রাজি নন।
ভোটের পরে দু’দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন রানাঘাটের কংগ্রেস প্রার্থী মিনতি বিশ্বাস। এর পর বিভিন্ন জায়গায় কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি নির্বাচনের হাল হকিকত সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। এজেন্ট ফর্ম নিয়ে বৈঠক, এজেন্ট স্থির করা নিয়ে আলোচনাও চলছে। রাতে বাড়ি ফিরে খবরের কাগজ পড়ছেন খুটিয়ে। ভোটের ফল নিয়ে চিন্তা করছেন না।
কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে চলে গিয়েছিলেন মেদিনীপুরে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হয়ে প্রাচার করেছেন কয়েক দিন। তার পর উত্তর কোলকাতায় রাহুল সিংহের হয়ে প্রচার করতে হয়েছে তাঁকে। সোমবার এক ফাঁকে এসেছিলেন কৃষ্ণনগরে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। অমিত শাহের কর্মসূচির জন্য মঙ্গলবারই ফিরে যেতে হল কলকাতায়। এ সবের মধ্যে তাঁর নিজস্ব লেখালেখি চলছে। নামী প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একাধিক গল্পের বই। ঠিক করেছেন, এ বার লিখবেন ভোটে তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে। ল্যাপটপে বসে একমনে খসরা তৈরি করছেন। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র আপাতত ব্যস্ত বিভিন্ন জায়গায় দলীয় প্রার্থীদের ভোট প্রচার নিয়ে।
সিপিএম-প্রার্থী শান্তনু ঝা কৃষি বিজ্ঞানীও বটে। ভোট প্রক্রিয়া মিটতেই তাই তিনি আবার ছুটে গিয়েছেন চাষিদের মাঝে। কী করে আমের বিকল্প হিসাবে লেবু চাষে তাঁদের উৎসাহিত করা যায় মালদহে বসে তিনি সেই কাজটাই করে চলেছেন। কৃষ্ণনগরের নিজের ভোট পর্ব মিটতেই তিনি বনগাঁ কেন্দ্রে দলায় প্রার্থী অলকেশ দাসের হয়ে প্রচার করেন। সেখান থেকে চলে গিয়েছেন মালদহে,নিজের দেশের বাড়িতে। সেখানে গাছগাছালি নিয়ে আছেন। কংগ্রেস প্রার্থী ইনতাজ আলি শাহ প্রাক্তন বিচারক।ভোট মিটতে তিনিও কৃষ্ণনগর থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছেন। কর্মীদের সঙ্গে বিশেষ কোনও যোগাযোগও রাখেননি। কলকাতার বাড়িতে আছেন। রোজা রাখছেন। সময় পেলেই বসে যাচ্ছেন বই নিয়ে।