রঘুনাথগঞ্জের ভাগীরথী সেতু। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
গত তিন সপ্তাহে জঙ্গিপুরে ভাগীরথী সেতু থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে পাঁচ পাঁচটি আত্মহত্যার চেষ্টা হয়েছে। তবে আশার কথা, এক জনও সফল হননি। স্থানীয় পথচারী ও ট্রাফিক গার্ডেরা তা রুখে দিয়েছেন। সব ক’টি চেষ্টা হয়েছে দিনে দুপুরে।
জঙ্গিপুরে সেতুর উপর থেকে ভাগীরথী নদীতে নিজের কোলের বছর দেড়েকের শিশুকে ছুড়ে ফেলেন তারই মা গত ১ মে সকালে। সেতুর নীচে নদীর পাড়ে শ্মশানের মন্দিরে বসে আড্ডা দিতে গিয়ে তা দেখে রাজকুমার মাহাতো নামে এক যুবক জলে ঝাঁপিয়ে সেই শিশুকন্যাকে রক্ষা করেন। একই ভাবে দিন তিনেক পরে এক মহিলাকে সেতুর উপর ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় পথচারীদের। মেয়েটি সেতুর রেলিংয়ে পা দিতেই দু’জন গিয়ে ধরে ফেলেন তাকে। বোঝানো হয় অনেকক্ষণ ধরে। পরে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় তার বাড়িতে। পর পর আরও দুটি ঘটনার সাক্ষী সেতুর উপর থাকা ট্র্যাফিক গার্ডেরাই। দুই মহিলাকে রক্ষা করেন ডিউটিরত ট্রাফিক রক্ষীরাই।
সোমবার ঘটে আরও একটি ঘটনা। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি অটোতে করে সম্মতিনগর থেকে সেতুর উপর দিয়ে রঘুনাথগঞ্জে যাচ্ছিলেন দুই তরুণ তরুণী। অটো চালকের কথায়, “অটোতে চড়ার পর থেকেই তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। সেতুতে উঠে কিছুটা যেতেই হঠাৎই চলন্ত অটো থেকে নেমে পড়েন ওই তরুণ। সেতুর ধারে গিয়ে খুলে ফেলেন পায়ের জুতো। কেউ কিছু বোঝার আগেই ঝাঁপ দেন ভাগীরথীর জলে। পরে অবশ্য তিনি নিজেই সাঁতরে পাড়ে ওঠেন এবং পালিয়ে যান।’’
সে ক্ষেত্রে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন না পালাতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে। তবে অনেকের ধারণা, সাঁতার জানায় তাঁর আত্মহত্যার চেষ্টা সফল হয়নি।
ট্রাফিক ওয়ার্ডেন নয়ন শেখ বলেন, “শুধু মে মাসেই পরপর ৫টি ঘটনা ঘটল সেতুতে। স্বভাবতই সকলেই উদ্বিগ্ন। ট্রাফিকের ডিউটির পাশাপাশি নজর রাখতে হচ্ছে সেতুতেও। কখন কী ঘটে এই আশঙ্কায়।”
জঙ্গিপুর কলেজের দর্শনের অধ্যাপিকা রনিতা মিত্র বলেন, “কোভিডের পর নানা ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্কট বেড়েছে। মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে যখন সে মনে করে তার বেঁচে থাকার সব রাস্তা বুঝি বন্ধ। এ ক্ষেত্রে সহনশীলতার অভাব দেখা দিচ্ছে। তাই সচেতনতা গড়ে তুলতে কাউন্সেলিংটা খুব জরুরি।’’