মনোনয়ন দিয়ে মিছিলে কৃষ্ণগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র
উপরওয়ালাদের হুমকিতে কাজ হল না। নিজেদের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সিপিএমের যুবনেতা মৃণাল বিশ্বাসকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন পেশ করালেন হাঁসখালির কংগ্রেস নেতারা।
শনিবার কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রের জন্য সিপিএম প্রার্থী মনোনয়ন পেশ করায় নদিয়ায় এই প্রথম কোনও কেন্দ্রে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’-এর পরিস্থিতি তৈরি হল। কেননা দলের একটা বড় অংশ না চাইলেও শুক্রবারই মনোনয়ন জমা দেন কংগ্রেসের নিত্যগোপাল মণ্ডল।
দুই শিবিরেই যে প্রশ্নটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হয়ে উঠেছে, সেটা হল, এর পরে কী?
এমনিতে এই কেন্দ্র নিয়ে সিপিএম বা কংগ্রেস, কোনও পক্ষই যে বিশেষ লালায়িত, তা নয়। কেননা গত বছর উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে লড়তে যাওয়া এই নিত্যগোপালের জামানত বাজেয়াপ্ত করেই তৃণমূল বুঝিয়ে দিয়েছিল, সেখানে তাদের জোর কত। সিপিএমের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। একজোট হয়ে লড়লে এখানে কপাল খুলতে পারে, এমন আশা দুই দলের বেশির ভাগ নেতারই সম্ভবত নেই।
কিন্তু জোটপন্থী নেতাদের ভাবাচ্ছে অন্য একটি প্রশ্ন। সেটা হল, প্রায় খরচের খাতায় থাকা একটি কেন্দ্রে জেদাজেদির কারণে জেলা জুড়ে ‘ভুল বার্তা’ চলে যেতে পারে। ধাক্কা খেতে পারে জোটের উদ্দীপনা। সিপিএম বা কংগ্রেস, কেউই যদি শেষমেশ প্রার্থী না তোলে, তবে সেই ঝুঁকি থাকবেই।
এক পক্ষ প্রার্থী তুললেই যে জট কেটে যাবে, তা অবশ্য নয়। কেননা কংগ্রেসের গৃহযুদ্ধের জেরেই সিপিএম পরে আসরে নেমেছে। আদতে ওই কেন্দ্রটি কংগ্রেসকেই ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস দু’বার প্রার্থী বদল করে। প্রথমে হাঁসখালির বিশ্বনাথ বিশ্বাস, তার পরে ‘বহিরাগত’ প্রতাপ রায়। শেষ পর্যন্ত নিত্যগোপাল। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের কংগ্রেস কর্মীরা সঙ্গে থাকলেও হাঁসখালির নেতাকর্মীদের তিনি পাশে পাচ্ছেন না।
হাঁসখালির কংগ্রেস কর্মীরা প্রথমে বিশ্বনাথের প্রার্থিপদ ফেরানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। তা সম্ভব নয় বুঝে পরে তাঁরা সিপিএম নেতাদের দ্বারস্থ হন। হাঁসখালি ব্লক কংগ্রেস সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতেই বগুলা লোকাল সম্পাদক তথা ডিওয়াইএফ-এর জেলা সম্পাদক মৃণাল বিশ্বাসকে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত হয়। এর জন্য তাঁদের সাসপেন্ড করা হতে পারে বলে জেলা নেতৃত্বের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। তাতে পাত্তা না দিয়ে মনোনয়ন পেশের সময়ে দিনেশই প্রস্তাবকের কাজ করেন। বিকেলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলও করেছেন মৃণাল।
আপাতত মৃণাল ও নিত্য দু’জনই নিজেকে ‘জোটপ্রার্থী’ বলে দাবি করছেন। কিন্তু তাতে যে ভবি ভোলার নয়, তা-ও দু’জন ভাল করে জানেন। তা হলে, শেষমেশ কী হবে? এক দল প্রার্থী তুলে নেবে না কি লড়াই?
দুই প্রার্থীই বলছেন, তাঁরা দলের ‘অনুগত সৈনিক’, দল লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বললে তা-ই করবেন। কিন্তু দল কি তা বলবে? কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অসীম সাহা বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রদেশ সভাপতি দেখছেন। তিনিই যা করার, করবেন।’’ আর, সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘জেলার বাকি ১৬টি আসনে যেমন কোনও সমস্যা হয়নি, এই আসনেও হবে না। তৃণমূলকে হারাতে যা করার করব।’’
কী করবেন, তা স্পষ্ট হতে বোধহয় আর দিন দুয়েক লাগবে।