কল্যানী বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সি বি আনন্দ বোস, , নদিয়ার কল্যনিতে। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
গত ৬ ডিসেম্বর, বুধবার সন্ধ্যায় সমাবর্তন উৎসব স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরেও বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই উৎসব হল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেন আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। স্থগিতাদেশের পরেও কী ভাবে সমাবর্তন উৎসব হল সেই প্রশ্নই এখন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। যদিও উৎসব স্থগিতে তাঁর সম্মতি ছিল না বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
বৃহস্পতিবার দুপুর প্রায় বারোটা নাগাদ আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কনভয় কল্যাণী শহরে প্রবেশ করতেই 'গো ব্যাক' স্লোগান দিতে থাকে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের কিছু আগে রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে কালো পতাকাও দেখানো হয়। অস্থায়ী উপাচার্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রথম থেকেই সমাবর্তন উৎসবের বিরোধিতায় আন্দোলনের পথে হেঁটেছিল তৃণমূলপন্থী শিক্ষক সংগঠন। গত মঙ্গলবার, উপাচার্যের সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে তৃণমূল পন্থী শিক্ষকদের একাংশ, কর্মী এবং টিএমসিপি-র কয়েকজন ছাত্র দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি ছিল, শংসাপত্রে উপাচার্যের সই থাকে। কিন্তু বর্তমানে যিনি উপাচার্যের দায়িত্ব রয়েছেন তিনি অস্থায়ী। আর অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়োগের বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।
এদিন রাজ্যপাল সাংবাদিকদের বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। যারা এই বিরোধের সৃষ্টি করতে চাইছে, তাদের কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমত উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে।"
গত বুধবার দুপুরে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে উৎসবের কোর্ট মিটিং স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায়। ওই দিনই সন্ধ্যায় ফের উৎসব স্থগিতের আর একটি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। প্রশ্ন উঠছে, সমাবর্তন উৎসবের কোর্টের চেয়ারম্যান খোদ আচার্য-রাজ্যপাল। তাই তাঁর সম্মতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি জারি করলো কী ভাবে করে!
বৃহস্পতিবার উপাচার্য অমলেন্দু ভুঁইয়া বলেন, "উৎসব স্থগিতের নোটিসে আমার সম্মতি ছিল না। শুধুমাত্র কোর্ট মিটিংয়ের নোটিসে আমার সম্মতি লেখা ছিল।" তাঁর দাবি, "গত মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে জেলাশাসকের ফরোয়ার্ড একটি মেল আমি রিসিভ করি। তখনই জানতে পারি রাজ্যপাল আজ, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসছেন। আমি রাতেই আধিকারিক থেকে সকলকে বিষয়টি জানিয়ে দিতে বলি রেজিস্ট্রার।" উপাচার্য আরও বলেন, ‘‘পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎসব করতে পারিনি। বিষয়টি রাজ্যপালকে জানিয়েছি। উনি সমাবর্তন উৎসবের সূচনা করেন।" তবে এ দিন উৎসবে রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয় আধিকারিকরা গরহাজির ছিলেন। এই বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য, "ওটা ওঁদের সিদ্ধান্ত।" তবে এর জন্য রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা স্পষ্ট করেনি তিনি। যদিও রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় দাবি করেছেন, "বুধবারের দুটি বিজ্ঞপ্তিই উপাচার্যের সম্মতিতে জারি হয়েছিল।"
সমাবর্তন নিয়ে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক সংগঠনের সদস্য বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, "উৎসব হচ্ছে কি না আমার জানা নেই। রাতের অন্ধকারে চোর-পুলিশ খেলা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।" বামপন্থী অধ্যাপক সংগঠনের তরফে প্রবীর প্রামাণিক বলেন, "এদিন যা ঘটল তা না ঘটলেই ভাল হত। তবে আগেও অস্থায়ী উপাচার্য থাকাকালীন সমাবর্তন হওয়ার একাধিক উদাহরণ রয়েছে।" এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন যে দায়সারা ভাবে হয়েছে, তা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনেকে। উৎসব হবে কি না এই বিভ্রান্তিতে অনেক পড়ুয়া, গবেষক এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির থাকতে পারেননি। এ দিন মোট ৬২৯ জন পিএইচডি (ডক্টরেট) এবং ১২৬ জন পদক পেয়েছেন। পাঁচ বছর পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হলেও তাকে ঘিরে বিতর্ক এড়ানো গেল না।