কল্যাণী জেএনএম হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে আয়োজিত গণ-কনভেনশনের জন্য অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি দিয়েও বাতিল কর দিলেন কল্যাণী জেএনএম কর্তৃপক্ষ।
ওই মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (আরডিএ) সঙ্গে যৌথ ভাবে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) কল্যাণী শাখা আজ, শনিবার দুপুর ১টা থেকে ওই গণ কনভেশনের ডাক দিয়েছিল। আরডিএ-র আবেদন পাওয়ার পরে প্রথমে অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি দেওযা হলেও পরে অধ্যক্ষের তরফে পাঠানো ই-মেলে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কারণে সৃষ্ট দুর্যোগের পরিস্থিতিতে এসি, আলো, সাউন্ড সিস্টেমের মতো ভারী বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না-ও করতে পারা যেতে পারে। তাই অডিটোরিয়াম ব্যবহারের অনুমতি আপাতত বাতিল করা হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে আজ, শনিবারই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে গণ-কনভেনশনের ডাক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিহত স্নাতকোত্তর স্তরের ওই ছাত্রী যেহেতু কল্যাণী জেএনএম থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিলেন, তাই এখানেও পৃথক কনভেশনের ডাক দেওয়া হয়। প্রথমে শুধু আইএমএ এই আয়োজনে থাকলেও পরে আরডিএ তাতে যুক্ত হয়ে অডিটোরিয়াম চেয়ে আবেদন জানায়। প্রথমে তাতে অনুমতি দিলেও বৃহস্পতিবার অধ্যক্ষ তা বাতিল করে দেন।
এর পরে ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও ওই কনভেনশন করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছিল। পরে তা-ও স্থগিত হয়ে যায়। শুক্রবার আরডিএ-র সভাপতি আরমান হক বলেন, “অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, এই দুর্যোগের সময় হাই-ভোল্ট বিদ্যুৎ ব্যবহারে সমস্যা রয়েছে। আমরা কর্মসূচি স্থগিত রাখছি। পরে তা পালিত হবে।”
তবে জেএনএমের পড়ুয়া ও চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, ঘূর্ণিঝড় উপলক্ষ মাত্র। নিজের পিঠ বাঁচাতেই অধ্যক্ষ ওই অনুমতি বাতিল করেছেন। কারণ, কনভেনশনের বক্তার তালিকায় এমন কিছু নাম ছিল যাঁরা একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাবলম্বী বলে পরিচিত। এঁরা কনভেনশনে কী ধরনের কথাবার্তা বলতে পারেন, সে সম্পর্কে জেএনএমের কর্তারা নিশ্চিত হতে পারেননি।
তা ছাড়া ‘গণ-কনভেনশন’ বললেও তাতে জনগণের অংশগ্রহণ কতটা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জেএনএম সূত্রের দাবি, বক্তার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল তাঁদের মধ্যে মাত্র দু’জন বাদে আর কারও কল্যাণী জেএনএমের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা বা নাগরিক মঞ্চের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়নি। এই নিয়ে কলেজের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তা ছাড়া প্রথম বর্ষের কিছু পড়ুয়াকে ওই কনভেনশনে যোগ দেওয়ার জন্য জোর বা চাপাচাপি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। আরমান অবশ্য বলেন, “এটা একটা রটনা। আমরা যেখানে হুমকি-প্রথা বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করছি, সেখানে আমরাই কাউকে জোরাজুরি করছি, চাপ দিচ্ছি, এটাও আবার হয় নাকি?”
জেএনএমের অধ্যক্ষ মণিদীপ পালকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে ডিন অব স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স সৌগত বর্মণ দাবি করেন, “দুর্যোগের মধ্যে এত বড় প্রেক্ষাগৃহে উচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চালানো বিপজ্জনক হতে পারত। আর, আমাদের সব কর্মী দুর্যোগের মধ্যে এসে পৌঁছতে পারবেন কি না তা নিয়েও সংশয় ছিল। এ ছাড়া অডিটোরিয়ামের অনুমতি বাতিল করার অন্য কোনও কারণ নেই।”