প্রতীকী ছবি।
জেলার বেশ কয়েকটি পুরসভার মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। প্রশাসক বসিয়ে চাকদহ, কৃষ্ণনগরের মতো পুরসভাগুলির কাজ চলছে। কয়েক মাসের মধ্যেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে আরও কয়েকটি পুরসভার।
ফলে, পুরভোটকে ‘পাখির চোখ’ করে প্রস্তুতি শুরু করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার কল্যাণীর বিদ্যাসাগর মঞ্চে পুরভোটের প্রস্তুতি বৈঠক করেন নদিয়া জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের রানাঘাট ও কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ ও মহুয়া মৈত্রও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের সভায় কাউন্সিলর, ওয়ার্ড সভাপতি ও শহর সভাপতিদের ডাকা হয়েছিল। বেশির ভাগ এসেওছিলেন। ব্যতিক্রম শুধু হরিণঘাটা পুরসভা। ওই পুরসভার ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলের মধ্যে গুটিকয় হাজির হন। পুরপ্রধান মানিক ভট্টও যান অনেক বাদে, সভা শুরু হওয়ার পরে।
এ প্রসঙ্গে মানিক ভট্টের বক্তব্য, ‘‘বুধবার শঙ্কর সিংহ আমার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। সেটা আমি দেখিনি। এ দিন সভা শুরুর সময়ে বিধায়ক নীলিমা নাগ ও সভাপতি ফোন করে আসতে বলেন। তার পরেই আমি আর উপ-পুরপ্রধান সঞ্জীব রাম দ্রুত চলে যাই। আগের পুরপ্রধান রাজীব দালালও ছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ কাউন্সিলরই ভুল বোঝাবুঝির কারণে যেতে পারেননি।’’
হরিণঘাটার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এই নিয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এই সভায় শহর তৃণমূলের সভাপতি উত্তম সাহা ডাকই পাননি। তিনি ডাক পেলে সকলকে নিয়ে যেতে পারতেন। যাঁর কাঁধে পুরভোটের বৈতরণী পার করার দায়িত্ব, তাঁকেই ডাকা হয়নি। রুদ্ধদ্বার বৈঠকে থাকা গয়েশপুর পুরসভার এক কাউন্সিলরের দাবি, হরিণঘাটা শহর সভাপতি ও একাধিক কাউন্সিলরের অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিধায়ক নীলিমা নাগ মল্লিক।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ উত্তমের বক্তব্য, হরিণঘাটার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু দলের পর্যবেক্ষকের বৈঠক আছে বলে সেই কর্মসূচি তিনি বাতিল করেন। কিন্তু সেই বৈঠকে ডাকই পেলেন না! উত্তম বলেন, ‘‘নেতারা বলছেন, আমাকে নাকি মঙ্গলবার রাতে মেসেজ করা হয়েছিল। কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও মোবাইলে এ রকম কোনও মেসেজ আমি পাইনি। একটা ফোনও তো করা যেত। এটা পর্যবেক্ষককে বলব।’’
উত্তম-ঘনিষ্ঠদের আক্ষেপ, ২০১৬ সালে শহর তৃণমূলের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল। হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথই বকলমে শহরের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। উত্তম বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে আমাদের শহর থেকে লিড পেয়েছিল দল। ভোটের ফল বেরনোর পরে বিজেপির একাধিক হামলাও আমি রুখে দিয়েছিলাম। সকাল-সন্ধ্যা কর্মীদের নিয়ে শহরে ঘুরে বেড়িয়েছি। কয়েক জন কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিলেও পুরপ্রধান বদলে বোর্ড টিকিয়ে রেখেছি।’’
উত্তমের অনুগামীদের অভিযোগ, সেই সময়ে বিধায়ক বা চঞ্চল দেবনাথকে পাশে পাওয়া যায়নি। এখন দলের পরিস্থিতি ভাল হতে ফের উত্তমকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তমের দাবি, ‘‘নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে লোকসভা ভোটের পরে সংগঠন ধরে রাখলাম আমি। আর এখন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে কেউ কেউ আমার বিরোধিতা করছেন।’’ পুরপ্রধানও বলেন, ‘‘শুনছি, উত্তমকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। খুবই খারাপ লাগছে। পুরসভা দখলে রাখার ক্ষেত্রে ওঁর অবদান ভুললে চলবে না।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় দলের বিপুল ভোটে পিছিয়ে থাকা নিয়ে রাজীব অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এক কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘রাজীবদা জানতে চেয়েছেন, এতটা পিছিয়ে থেকে কী ভাবে পুরভোটে ভাল ফল করা যাবে? তবে প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা তাঁকে জয়ের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। ও দিকে, চাকদহের নেতাদেরও ভাল করে কাজ করতে বলেছেন পর্যবেক্ষক।’’
রাতে শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘আজ ১১টা পুরসভার জনপ্রতিনিধি ও নেতারা এসেছিলেন। কিন্তু হরিণঘাটার পুরপ্রধান মেসেজ দেখেননি। ফলে দেরিতে এসেছেন। কিছু কাউন্সিলরও হয়তো অনুপস্থিত ছিলেন। আর, উত্তম সাহার ক্ষোভ থাকলে তাঁকে বিষয়টা দলে জানাতে হবে। তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে আর কিছুই বলব না।’’