নতুন ঘরের পাশাপাশি চলছে ঝিল বোজানো। নিজস্ব চিত্র
সরকারি জমি জবরদখল করে কলোনি বসিয়ে দেওয়া কল্যাণী শহরে নতুন নয়। এখনও তা চলছে। কে বা কারা এর পিছনে রয়েছে তার প্রচ্ছ্ন্ন ঈঙ্গিত মিললেও কেউই তা স্বীকার করতে রাজি নয়।
কল্যাণী পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এন্ড্রু ইয়ুল কোম্পানির অতিথিশালার প্রাচীরের পিছনে রয়েছে বিরাট ঝিল। সেই ঝিলের পাড়ে এস্টেট ম্যানেজারের জমিতে বসে গিয়েছে বেশ কিছু পরিবার। এখনও গেলে দেখা যাবে, তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী ঘর। পাড় থেকে আবর্জনা ফেলে ঝিলের কিছুটা অংশ বোঝানোর কাজও চলছে ধীরে ধীরে। শৌচালয়ের বেশ কয়েকটা কুয়োও ওই ঝিলের মধ্যেই করা হয়েছে। কিন্তু এস্টেট ম্যানেজার দফতরের কোনও হুঁশ নেই।
এস্টেট ম্যানেজার দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, পুরো ঝিলটা এক সময়ে প্রায় ৭০ একর জুড়ে তিন ভাগে ছিল। ঝিলে মাছ চাষ নিয়ে একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে ওই সংস্থার সঙ্গে হাই কোর্টে মামলাও চলছে ২০০৫ সাল থেকে। ঝিলপাড়ে বসতি বসা বা আবর্জনা দিয়ে ঝিলের পাড় থেকে বোজানো যে চলছে, তা দফতরের অনেক কর্তাই জানেন। সকলেই নীরব। এস্টেট ম্যানেজার দিব্যেন্দুলাল ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানাব।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বসতি গড়ে ওঠা ওই জায়গাটিকে বলা হয় নতুনপাড়া। পরিবারগুলির অনেকেই শিল্পাঞ্চল এলাকায় প্লাস্টিক কারখানায় কর্মরত। গত দু’তিন বছর ধরে কেউ কেউ বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন ঘর করছেন। তাঁদেরই এক জনের দাবি, “তৃণমূল থেকে ওখানে বসবাসের জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে।” আবর্জনা ফেলে ঝিল বোজানোর কাজ চলছে কতদিন ধরে? ওই বাসিন্দা বলেন, “গত দু’বছর ধরেই চলছে। তবে সবটা তো আর বোজানো হচ্ছে না!” কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, যখন যেমন হাতে টাকা আসে সেই অনুযায়ী ঝিল বোজানোর কাজ চলে। মাস ছ’য়েক আগে বিদ্যুতের লাইনও পৌঁছে গিয়েছে ওই এলাকায়।
ওই ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি তথা তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত কল্যাণী পুরসভার উপ-পুরপ্রধান বলরাম মাঝি বলেন, “যাঁরা তিন বছর আগে এঁদের বসিয়েছেন, এখন কোথায় এঁদের ফেলে দেব?” বলরামের আগে ওই ওয়ার্ডে তৃণমূলের পুরপ্রতিনিধি থাকা গীতা রাম আবার বলেন, “ওখানে দল থেকেই বসিয়েছে। এই ব্যাপারে আমাকে নাক গলাতে বারণ করেছিল।” নাক গলাতে কে বারণ করেছিল, সেটা অবশ্য তিনি বলেননি।
বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের অভিযোগ, “কল্যাণী শহরের সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে শহরের শাসক দলের বিভিন্ন পদে থাকা নেতারা। টাকার বিনিময়ে বসতি বসাচ্ছে। এখানেও তাই হচ্ছে। ভবিষ্যতে সরকার কোনও প্রকল্প করতে গেলে সরকারের কাছে কোনও জমি থাকবে না।”
এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব দে বলেন, “বিধায়ক ওঁর মতো করে বলতেই পারেন। কিন্তু যাঁরা বসে গিয়েছেন, তাঁদের তুলব কী করে?” তাঁর দাবি, “সরকারি জমিতে লোক বসানোর রাজনীতি আমিও পছন্দ করি না। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর নতুন করে কাউকে বসাইনি। কিন্তু ফাঁকা জমিতে বসে যাওয়ার প্রবণতা আটকানো খুব মুশকিল।”
বিপ্লবের আগে কল্যাণী শহর তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কু। বর্তমানে জেলা কমিটির সদস্য টিঙ্কু অবশ্য এতে সরকারি জমিতে লোক বসানোয় দলের গোটা ভূমিকাই অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “২০১৫সাল নাগাদ ওখানে কয়েকটা ঘর উঠেছিল, সেটা ভেঙে দিয়েছিলাম। ২০১৯ সাল নাগাদ আবার ঘর উঠতে শুরু করলে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। দল থেকে কাউকে বসানো হয়নি।”