পাখি-মুক্তি। নিজস্ব চিত্র
এজলাসের এক কোণে তখনও ডানা ঝাপটাচ্ছে খাঁচা বন্দি এক ঝাঁক কাদা খোঁচা, গাইবগলা আর মাছরাঙা।
নির্দেশ দিয়ে চেয়ারটা ঈষৎ পিছনে ঠেলে উঠে দাঁড়ালেন বিচারক। তার পর নেমে এলেন সটান আদালত চত্বরে। বহরমপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের সিজেএম অন্নদাশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের পিছনে তখন গোটা এজলাস যেন ভেঙে পড়েছে। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে খাঁচাবন্দি পাখিগুলি খোলা আকাশে একে একে ছেড়ে দিলেন তিনি।
বাজারসাউয়ের শক্তিপুরের কাছে ছড়ানো জলা জমি। স্থানীয় মানুষ চেনেন, পশ্চিমনগর বিল। গত কয়েক দিন ধরেই সেই বিলে নাইলনের জাল পেতে পাখ-পাখালি ধরছিল জনা কয়েক যুবক। গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে সেখানে হানা দিয়ে তাদের তিন জনকেই ধরে বনকর্মীরা। তার পর তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। শুক্রবার তাদের সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃত তিন জনকেই ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তার পর খাঁচা বন্দি পাখির বেশ কয়েকটিকে নিজে হাতে ছেড়ে দিয়েছেন আকাশে। বাকিগুলি তুলে দেওয়া হয় বন দফতরের হাতে। স্থানীয় বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েকের মধ্যেই উপযুক্ত পরিবেশে তাদেরও মুক্তি দেওয়া হবে।
শুধু বাজারসাউ নয়, মুর্শিদাবাদ জেলার আনাচ কানাচে পাখ-মারা বা পাখি ধরার কারবার নতুন নয়। প্রতি শীতে জলার ধারে জাল পেতে পাখি ধরার রেওয়াজ রয়েছে জেলায়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই তালিকায় পরিযায়ী পাখিও রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনগুলির সাহায্য নিয়ে গ্রামবাসীদের সচেতন করার চেষ্টাও চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। তারই সুফল মিলল বাজারসাউয়ে। গ্রামবাসীরাই বন বিভাগে খবর দেওয়ায় ধরা পড়ে তিন পাখমারা।