ধৃত বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৭ এপ্রিল ভোরে বড়ঞার বিধায়ক তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ সাহাকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। দু’দফায় আট দিন সিবিআই হেফাজতে থাকার পর আজ মঙ্গলবার, ফের বিধায়ক জীবনকৃষ্ণকে আদালতে তুলবে সিবিআই। কিন্তু এর পর জীবনকৃষ্ণের মুখ থেকে কাদের নাম বা কী কী তথ্য সিবিআই জানতে পেরেছে সেটা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে এলাকায়।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র থেকে জানাযায়, জীবনকৃষ্ণ শাসক দল তৃণমূল জামানার আগে বাম জামান থেকেই শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় শিক্ষক নিয়োগের জাল বিস্তার করেছিলেন। শুধু শিক্ষক নিয়োগই নয়, বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন শংসাপত্র ছাড়াও ভুয়ো শিক্ষাগত যোগ্যতার নথিও ব্যবস্থা করতেন তিনি বলে অভিযোগ।
দাবি, বড়ঞার আন্দির বাড়িতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য রীতিমতো আস্ত একটি ‘দফতর’ খুলে ছিলেন জীবনকৃষ্ণ। অভিযোগ, একাধিক এজেন্ট বা দালাল জীবনকৃষ্ণের কাছে চাকরি প্রার্থী নিয়ে আসতেন। সঙ্গে মোটা টাকাও। পরে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতা দখলের পর শাসক দলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীদের ‘কাছের’ মানুষ হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন জীবনকৃষ্ণ। জীবনকৃষ্ণ নিজের ব্লক বড়ঞা ছাড়াও খড়গ্রাম, বীরভূমের সাঁইথিয়া এলাকার লোহাজং গ্রামেও দালার ছিল। যারা সরাসরি জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি পুলিশের একাংশের।
বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রে ২০২১ সালে তৃণমূল প্রার্থী করে জীবনকৃষ্ণকে। তখন প্রচারেও শিক্ষক নিয়োগের দালাল বলে বিরোধীরা প্রচার করলেও জীবনকৃষ্ণকে বিধায়ক হিসাবে আটকাতে পারে না। অবশেষে বিধায়ক হন জীবনকৃষ্ণ। কিন্তু তারপরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বড়ঞা ব্লকের ভড়ঞা গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক ঘোষকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে গ্রেফতার করে সিবিআই। গত ১৪ এপ্রিল জীবনকৃষ্ণের আন্দির বাড়িতে সিবিআই আচমকা হানা দেওয়ার প্রায় ৬৬ ঘন্টা ধরে জিঞ্জাসাবাদ করার পর ১৭ এপ্রিল ভোরে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে সিবিআই জীবনকৃষ্ণকে দু’দফায় আট দিন ধরে জিঞ্জাসাবাদ করার পর শাসক তৃণমূলের নেতাদের থেকেই বেশি চিন্তায় যারা সরাসরি জীবনকৃষ্ণের সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। জীবনকৃষ্ণকে সিবিআই গ্রেফতার করার পর ওই সমস্ত দালাল যারা শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকেই এখন গ্রাম ছাড়া অবস্থায় রয়েছেন বলে দাবি। কেউ আবার বাড়ি থাকলেও মন পড়ে রয়েছে সিবিআই কর্তাদের আসার অপেক্ষায়। এখন দেখার জীবনকৃষ্ণ আর কাদের নাম করেছে। আর কাদের কেই বা সিবিআই সমন পাঠায়। সেই অপেক্ষায় এলাকার বাসিন্দারা থেকে রাজনৈতিক কারবারিরা। জেলা কংগ্রেসের নেতা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার বলেন, “জীবনকৃষ্ণ সাহার আরও যারা নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সিবিআই এখনও কেন তাদের গ্রেফতার করছে না, সেটাই বুঝতে পারছি না।”