প্রতীকী ছবি।
জামাইষষ্ঠীতে যাওয়া তো নয়, এ যেন বিদেশযাত্রা!
দই, মিষ্টি, কাপড় নেওয়া হোক বা না-হোক, ভোটার কার্ড সঙ্গে নেওয়া চাই। প্রায় প্রত্যেক বছরই কাঁটাতারের বেড়ায় কেটে আটকে যান চরের জামাইরা। যে কারণে, জামাইষষ্ঠীর দিন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে চর মেঘনা গ্রামে জামাইদের প্রতি শ্বশুর-শাশুড়ির অবধারিত সতর্কবার্তা — “ভোটার কার্ড সঙ্গে এনো বাবা! ভুল যেন না হয়!”
নদিয়ার হোগলবেড়িয়া থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার গেট পেরিয়ে ও পারের গ্রাম চর মেঘনা। ১২০ নম্বর কাঁটাতারের গেটে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে ভোটের পরিচয়পত্র জমা দিয়ে এবং খাতায় নাম লিখিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ উজিয়ে গেলে তবে গ্রামে পৌঁছনো যায়। সে গ্রামের বাসিন্দা অনুপ বিশ্বাস বলছেন, “গ্রামের জামাইদের বারংবার বলে দেওয়া হয়, আমাদের গ্রামে আসার সময়ে অতি অবশ্যই যেন ভোটার কার্ড সঙ্গে আনেন।”
গত শীতে সে গ্রামের মেয়ে মাম্পি মাহাতোর বিয়ে হয়েছে হুগলির এক পাত্রের সঙ্গে। শুক্রবারেই দাদার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছে সে। মাম্পির কথায়, “এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছি। কাঁটাতারের এ পারে আসতে বা ও পারে যেতে সীমান্তের কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমার স্বামী রবিবার সকালে আসবেন। ওর ব্যাগে ভোটার কার্ড ঢুকিয়ে রেখে এসেছি।”
চর মেঘনার বিমল বিশ্বাসের মেয়ে রিতার বিয়ে হয়েছে মাস পাঁচেক আগে। তিনি বলছেন, “আগে থেকে বারবার জানিয়েছি। তবুও বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে কাঁটাতারের গেটের কাছে গিয়ে জামাইকে ভোটার কার্ড আনতে মনে করিয়ে ফের ফোন করে দিয়েছি।”
ষষ্ঠী উপলক্ষে গ্রামে এসেছেন সুদীপ মাহাতো। হাসতে-হাসতে তিনি বলেন, “আমরা তো স্পেশ্যাল জামাই, তাই সরকারি কার্ড দেখাতে হয়! প্রথমে কেমন একটা লাগলেও এখন বেশ সয়ে গিয়েছে।”
বিএসএফ সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশের মানুষ সঠিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে গ্রামে যাবেন, এতে অসুবিধে থাকার কথা নয়। নিরাপত্তার জন্যই এটা দরকার। জামাই বলে আলাদা খাতির নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা সমীর চট্টোপাধ্যায় জানান, গ্রামে প্রায় ১৭২টি পরিবারের বাস। সন্ধ্যার পরে কাঁটাতারের গেট বন্ধ হয়ে যায়। হোগলবেড়িয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রকাশচন্দ্র মণ্ডল বলেন, “বছর কয়েক আগে সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়ার কারণে চরের গ্রামের মেয়েদের বিয়ে দেওয়া কঠিন হয়েছে। তবে এখন বিএসএফ অনেকটা মানবিক ব্যবহার করছে।” চর মেঘনার মেয়ে সুলতা বিশ্বাস মুখ টিপে হেসে বলেন, “এ গাঁয়ের জামাইদের শ্বশুরবাড়ি আসতে হলে দই-মিষ্টি নেওয়া হোক বা না হোক, ভোটার কার্ড কিন্তু নিতেই হবে!”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।