‘বিনম্রতা’র আড়ালে নখ দেখাচ্ছে শাসক

এটা ফার্স্ট স্টেপ, শাসিয়ে গেল ওরা

ইঙ্গিতটা ছিলই। ফল প্রকাশের পরে তিনি যে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতে চান, নির্বাচনী প্রচারে পুলিশের ‘তৎপরতা’ দেখেই শাসিয়ে রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। চোয়াল শক্ত করে বার বারই বলেছেন, ‘পুলিশ কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি করছে’। এ বার কী তারই পাল্টা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০২:৫৫
Share:

দিদির নিষেধ ছিল— ‘কোনও গণ্ডগোল নয়’। কালীঘাটের সেই বার্তা পৌঁছয়নি হাঁসখালি কিংবা কল্যাণীতে। আর কী আশ্চর্য দেওয়াল জুড়ে লেপ্টে থাকে শান্তির আবহ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

ইঙ্গিতটা ছিলই।

Advertisement

ফল প্রকাশের পরে তিনি যে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতে চান, নির্বাচনী প্রচারে পুলিশের ‘তৎপরতা’ দেখেই শাসিয়ে রেখেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। চোয়াল শক্ত করে বার বারই বলেছেন, ‘পুলিশ কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি করছে’। এ বার কী তারই পাল্টা?

নির্বাচন কমিশনের নজরে পড়ে পক্ষপাতিত্বের দায়ে সরে যেতে হয়েছিল যে সব পুলিশ-আমলাকে, শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁদেরও প্রত্যাবর্তণ।

Advertisement

সেই আবহেই শুর হয়ে গিয়েছে বোট পরবর্তী হিংসা। চড়াম চড়াম শুরু হয়নি বটে, তবে ঢাকিরা যে ফিরে যায়নি, সে বার্তাও মিলতে শুরু করেছে জেলার আনাচ কানাচ থেকে।

কোথাও সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে শাসক দলের কর্মীরা তাই বলে গিয়েছেন, ‘‘এটা ফার্স্ট স্টেপ!’’ কোথাও বা কংগ্রেস নেতার কলার ধরে হেঁচকা টান মেরে বলা হয়েছে, ‘‘এ বার কোন সেন্ট্রাল ফোর্স বাঁচাবে চাঁদু!’’

এ দিন সন্ধ্যা থেকেই নদিয়ার বিভিন্ন অংশে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে দফায় দফায় শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সেই থমথমে আবহাওয়ার মধ্যেই উৎসাহী কর্মীরা দেওয়াল জুড়ে জনগণের উদ্দেশে টাঙিয়ে দিয়েছেন—সুবিশাল হোর্ডিং— অকুণ্ঠ ধন্যবাদ, আর বিনম্র শুভেচ্ছা বার্তা। যা দেখে সিপিএমের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘এটাই যদি বিনম্রতার প্রথম ধাপ হয় তাহলে বুঝতে পারছেন, এর পরে ধাপে কী অপেক্ষা করছে!’’

শুক্রবার রাতে হরিণঘাটা ও কল্যাণীর একাধিক জায়গায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সিপিএমের দলীয় কর্মীরা। হামলা চালানো হয়েছিল কার্যালয়ে।হামলা হয়েছে বাম নেতাদের বাড়িতেও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির ছিল শাসকদলের দিকে। এবং শাসকদলের পক্ষ থেকে যথারীতি সব অভিযোগ অস্বীকার করতেও সময় নেননি স্থানীয় নেতারা।

ভোটের অনেক আগে থেকেই নদিয়ার হরিণঘাটা, কল্যাণী, গয়েশপুরে শাসকদলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ উঠে ছিল। নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে সেই হিসাব ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নিতেই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়েছে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ।

শুক্রবার রাত দশটার কিছু পরে হরিণঘাটার মোল্লাবেড়িয়ায় সিপিএমের লোকাল কমিটির অফিসের তালা ভেঙে ঢুকে দলীয় কার্যালয়ের দখল নেয় এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা। দলীয় কার্যালয়ে রাখা যাবতীয় কাগজপত্র, ছবি, পতাকা পুড়িয়ে দেয়। দখল অভিযান সেরে ফেরার আগে নিজেরা তালা ঝুলিয়ে দেয় সেই দরজায়। ওই দিনই বেশি রাতে হরিণঘাটা বাসস্ট্যান্ডে সিটুর অফিসে হামলা চালায় এক দল দুষ্কৃতি। জানা গিয়েছে গত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলের হুমকির ভয়ে সিটুর ওই কার্যালয় খুলতেই পারছিলেন না শ্রমিকেরা।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে সিপিএমের হরিণঘাটা জোনাল কমিটির সম্পাদক হেমন্ত ভৌমিক বলেন, “ভোটের আগে থেকেই বিরোধীদের উপর একের পর এক আক্রমণ করে চলেছে শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। আমাদের কর্মী সমর্থকেরা বাড়ি ছাড়া হয়ে গিয়েছেন।’’

ওই দিন রাতেই কল্যাণীর সগুনা অঞ্চলের সিপিএম নেতা অলোক সরকারের বাড়িতে চড়াও হয় এক দল তৃণমূল কর্মী। সিপিএমের পার্টি সদস্য অলোকবাবু জানিয়েছেন, রাত এগারোটা নাগাদ একদল লোক মুখে গামছা বেঁধে তার বাড়ির কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তার পর চলে যথেচ্ছ ভাঙচুর। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। শনিবার সকালে তার বাড়িতে যান সিপিএমের মদনপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক রূপক সেনগুপ্ত, অলকেশ দাস। তবে ওইটুকুই। তাঁদের ভরসা দেওয়ার এর বেশি কিছু ছিল না।

সিপিএমের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তামাম তৃণমূল নেতারা। নদিয়া জেলাপরিষদের কর্মাধ্যক্ষ চঞ্চলবাবু বলেন, “ আসলে জোট এখন জট পাকিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএম একে অন্যের উপর দোষারোপ করে মারামারি করছে। আর দোষ দিচ্ছে আমাদের!’’a

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement