হাতের তালুতে লেখা ছিল গাড়ির নম্বর

নজর ছিল রুপোলি রঙের বোলেরো গাড়ি। হাতের তালুতে গাড়ির নম্বর লিখে আড় চোখে পথ চলতি গাড়ি দেখছেন পুলিশ কর্মীরা। সন্দেহ হলে, হাত তুলে দাঁড় করানো হচ্ছে গাড়ি। তার পর উঁকি মেরে সন্দেহ দূর করে— ‘যান চলে যান।’

Advertisement

বিমান হাজরা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১২
Share:

বৈশাখের কাঠ ফাটা রোদ। বেলা একটু গড়াতেই মোরগ্রামে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে শুরু হয়েছিল সাগরদিঘির পুলিশের নাকাবন্দি।

Advertisement

নজর ছিল রুপোলি রঙের বোলেরো গাড়ি। হাতের তালুতে গাড়ির নম্বর লিখে আড় চোখে পথ চলতি গাড়ি দেখছেন পুলিশ কর্মীরা। সন্দেহ হলে, হাত তুলে দাঁড় করানো হচ্ছে গাড়ি। তার পর উঁকি মেরে সন্দেহ দূর করে— ‘যান চলে যান।’

দু’বছর আগের ২৬ এপ্রিল। জেলা জুড়ে আগ্নায়াস্ত্র পাচারের খবর, ছড়িয়ে পড়ছে এক থানা থেকে অন্য থানায়।

Advertisement

হঠাৎ দুপুর জুড়ে পুলিশের এমন তৎপরতা দেখে অবাক হয়েছে আশপাশের মানুষজনও। ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেই গাড়ি কই?

হঠাৎই পুলিশের নজর পড়ে মোরগ্রামের দিকে ধেয়ে আসা একটি বোলেরোর দিকে। “স্যার, ওই একটা বোলেরো আসছে।’’ কনস্টেবলের কথায়, সতর্ক হয়ে পজিশন নেন অন্যরা।

কাছে আসতেই গাড়িটি থামাতে পুলিশ নেমে পড়ে রাস্তার উপরে। নম্বর মিলিয়ে দেখা যায় এটাই সেই গাড়ি। গাড়ি থামাতেই নেমে আসে এক ব্যক্তি। বছর ৪৫ বয়স। বাড়ি, নাম, কি আছে গাড়িতে— নাগাড়ে প্রশ্ন চলল। নিজের পরিচয় দিয়ে সে জানায়, সাইদুল শেখ, বাড়ি খড়গ্রামের এড়োয়ালি। ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে এসেছে চালকও। বাড়ি খড়গ্রামের পার্বতীপুর। জেলায় আপাত নিরীহ থানা বলে চিহ্নিত খড়গ্রাম।

চোখের ইশারায় ততক্ষণে পুলিশের ঘেরাটোপে বন্দি দু’জনেই। ইতিমধ্যেই গাড়িতে ঢুকে পুলিশ কর্মীরা শুরু করে দিয়েছেন তল্লাশি। পিছনের গেট খুলতেই একটা কালো ব্যাগের দিকে নজর গেল পুলিশের। ব্যাগটা গাড়ি থেকে রাস্তায় নামিয়ে খুলতেই চোখ কপালে পুলিশের। মিলল রাইফেল, বন্দুক, কার্বাইন, পাইপগান এবং নাইন এমএম পিস্তল মিলিয়ে ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র।

সাগরদিঘি থানায় নিয়ে গিয়ে শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ। বেশিক্ষণ নয়, একে একে উঠে এল আগ্নেয়াস্ত্র কারবারিদের নাম।

বিকেল ৫টা নাগাদ সাগরদিঘির পুলিশ হাজির বাঘিরাপাড়ার তাজিয়া সেখের বাড়িতে। কিন্তু এলাকায় তাজিয়া নয় আকবর নামেই চেনে তাকে সবাই। খোলা দরজা পেয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে পুলিশ। ঘরের মধ্যেই তখনও ঘুমিয়ে তাজিযা। এ ঘর সে ঘর তল্লাশির শেষে বিছানার তলা থেকেই মিলল একটি পাইপগান। ততক্ষণে একদল পুলিশ ঘিরে ফেলেছে পাশেই নেকবর সেখের বাড়ি। পুলিশ এসেছে জানতেই পালাবার চেষ্টা করতে গিয়েই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সে। দু’জনকে গাড়িতে তুলেই কান্দির আন্দুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চাঁদনগরে যখন পুলিশের গাড়ি পৌঁছল তখন সন্ধ্যে নেমেছে। নাকাবন্দিতে ধৃত এড়োয়ালির সাইদুলই চিনিয়ে দিল গাফফার সেখের বাড়িটা। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সটান বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ল পুলিশ। গাফফারকে সামনে পেতেই চারজন মিলে জাপটে ধরে মাথায় রিভলবারের নল। তাকে নিয়েই চলল তল্লাশি। এ বারও মিলল বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement