কংগ্রেস নেতাদের জার্সি বদলের সুবাদে এ বারই প্রথম কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েড হাতে এসেছে তৃণমূলের। কিন্তু সোমবার, শপথের দিনেই প্রকাশ্যে শাসক দলে কোন্দল।
কাজিয়ার কেন্দ্রে কুপার্সের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ। রবিবার রাতেই জানা যায়, বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান পিন্টু দত্তের বদলে ওই পদে বসছেন তৃণমূলের কুপার্স শহর সভাপতি দিলীপকুমার দাস। তার পরেই শুরু হয় গোলমাল। পিন্টু দত্তের লোকজন দিলীপ দাসের বাড়ির সামনে গিয়ে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে মিছিলও বের করা হয়। শেষে পিন্টুই বেরিয়ে হাতজোড় করে অনুগামীদের নিরস্ত করেন।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘কে কোন পদ পাবে, তা দলই ঠিক করবে। দু’এক জন কী করল, তাতে কিছু যায় আসে না।’’ কুপার্সের ‘অভিভাবক’ শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘সবাই মিলে বসেই এটা ঠিক করা হয়েছে।’’
১৩ অগস্ট রাজ্যের অন্য কিছু পুরসভার সঙ্গে কুপার্সেও নির্বাচন হয়েছিল। ১২টি আসনের সব ক’টি পেয়েছে তৃণমূল। এ দিন নোটিফায়েড এরিয়া অফিস প্রাঙ্গণে তৈরি মঞ্চে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান রানাঘাটের মহকুমাশাসক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী। তার আগে ওই অফিসের সামনেও বিক্ষোভ দেখান ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পিন্টু দত্তের লোকজন। তৃণমূল সূত্রে খবর, ভোটের আগে থেকেই নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছিল পিন্টুর। তাঁর বাবা, প্রবীণ নেতা তথা কাউন্সিলর বিমল দত্তের প্রভাব ছিল কুপার্সে। তাঁর প্রয়াণের পরেই পিন্টু দরাদরিতে নামেন। গত বারই তিনি কংগ্রেসের টিকিটে জিতে পরে দল বদলান। কিন্তু এই ভোটের আগে নিজের, মায়ের ও স্ত্রীর নামে তিনটি টিকিট দাবি করেন তিনি। দল তা মানেনি। পিন্টু ও তাঁর মা অনীতা দত্তকে প্রার্থী করা হলেও স্ত্রীকে দাঁড় করানো হয়নি।
উল্টো দিকে, কুপার্সে তৃণমূলের অন্যতম পুরনো কর্মী দিলীপ। শঙ্কর সিংহের নেতৃত্বে ১৯৯৭ থেকে পরপর চার বার জিতে আসা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসেন ২০১২-র ভোটের ঠিক আগে। ১১ জন কংগ্রেস প্রার্থীর পাশাপাশি জোড়াফুল চিহ্নে এক মাত্র তিনিই জেতেন। ২০১৪ সালে অবশ্য বাকি সব কাউন্সিলরও তৃণমূলে চলে আসেন। এ বারও দিলীপ ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। দলের শহর সভাপতি হিসেবে নিজের ওয়ার্ডের বাইরেও তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি ও প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এই ডানা ছাঁটা মানতে পারেনি পিন্টু-শিবির। এ দিন ‘কুপার্সে শান্তি চাই, পিন্টু দত্তকে ভাইস চেয়ারম্যান চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করা হয়। দিলীপ বলেন, “কিছু লোক দলের নামে তোলাবাজি, রাহাজানি করছে। তারাই এ সব করেছে।”
অনুগামী-ক্ষমতা জাহির করা হয়ে যাওয়ার পরে পিন্টু তাদের থামান। তাঁর দাবি, “আমায় ভালবাসেন, তাই আবেগ থেকে ওঁরা এটা করেছেন। দলের সিদ্ধান্ত তো মানতেই হবে।’’