প্রতীকী ছবি।
দলের প্রাক্তন নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে মুছে ফেলে ঘর গোছাতে বৈঠক ডেকেছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান। সেই বৈঠকে অধিকাংশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও দলের নেতারা উপস্থিত থেকে আপাতত ‘এককাট্টার’ চেহারা নিল মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের। মঙ্গলবার বিকেলে বহরমপুরে জেলাপরিষদের নবনির্মিত অডিটোরিয়ামের বৈঠক ছিল। সেখানে অসুস্থতা ও অন্যত্র বৈঠক থাকার কারণে রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনসহ চার জন ছাড়া বাকি সকলেই উপস্থিত ছিলেন বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে। বৈঠকে দলের কয়েকজন নেতৃত্ব একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেও বৈঠক শেষে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলের কয়েক জন নেতৃত্ব জেলাপরিষদের দরপত্র নিয়ে একাধিকবার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। জেলা পরিষদের দরপত্রে দুর্নীতি ইস্যুতে সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল (মধুর) পাশে দাঁড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের স্বচ্ছতার কাজ সঙ্গে কাজ হয়। দরপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ঠিক নয়। জেলা পরিষদ যে উন্নয়ন করেছে তা শীঘ্রই জেলা পরিষেদর পক্ষ থেকে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা এর আগের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন তার কারণ আমাদের জানিয়েছেন। নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন। এদিন সকলেই উপস্থিত ছিলেন। দুএকজন অনুগামী ছিলেন। তাঁরা থাকবেন না। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধভাবে ভোট পরিচালনা করব।’’ আগামী ১৬ জানুয়ারি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ফের একই ধরনের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জেলা পরিষদের খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম বরাবরই শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত। এদিনের বৈঠকে মইদুল বলেন, ‘‘শুভেন্দুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল, আছে, থাকবে। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ তাঁর বক্তব্য নিয়ে বৈঠকের ভিতরে অনেকেই প্রতিবাদ করেন। তবে বৈঠক শেষে মইদুল বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের জেরে দলের ক্ষতি হতে দেব না। একই সঙ্গে আমাদের এই ব্যক্তিগত সম্পর্কে কেউ হস্তক্ষেপ করলে তা মেনে নেব না।’’ বৈঠকে সাগরদিঘি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বেরাজুল ইসলামের বক্তব্যকে ঘিরে হইচই শুরু হয়। অভিযোগ তিনি বৈঠকে বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিধায়ক হস্তক্ষেপ করলে লোকজন ঝাটাপেটা করবে।
বৈঠকে জেলা তৃণমূলের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর সৌমিক হোসেন বলেন, ‘মইদুল ভাইকে বলব কারও সঙ্গে তোমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে সেই সম্পর্কের জেরে যেন দলের কোনও ক্ষতি না হয়। দলের ক্ষতি হলে মেনে নেব না।’’
সৌমিক হোসেন জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে বলেন, ‘‘মধু ভাইকে বলব, তোমার কাছে যে ছেলে থাকে। তাকে কন্ট্রোল কর। বাবন (মধু ঘনিষ্ঠ) আজকেও দলের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে। এসব বন্ধ করতে হবে। দলের বিরুদ্ধে কিছু করলে কাউকে ছেড়ে কথা বলব না।’’ অন্য কো-অর্ডিনেটরের এলাকা সত্ত্বেও সভাধিপতি বা মইদুল ইসলামকে নিয়ে বললেন কেন? সৌমিক বলেন, ‘‘জেলায় যেখানেই দলের ক্ষতিকর কিছু হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করব।’’ তবে সময় অভাবে এদিন অন্য কো-অর্ডিনেটর অরিত মজুমদার বক্তব্য রাখেননি।
কয়েক মাস আগে শুভেন্দু অধিকারী দলে থাকতে জেলা জুড়ে তাঁর ছবি দিয়ে দাদার অনুগামীর পোস্টার পড়েছিল। মঙ্গলবারের বৈঠকে দাদার অনুগামীর পোস্টার দেওয়ার কথা কার্যত স্বীকার করে জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, ‘‘‘মধু ফ্যান ক্লাব’-এর নামে যে সব পোস্টার ছিল সেগুলি খুলে ফেলে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দিয়ে যেমন ব্যানার লাগানো হবে, তেমনই লকডাউন পর্বে সভাধিপতি হিসেবে কী কাজ করেছি তাও ব্যানারে তুলে দেওয়া হবে।’’ যদিও বৈঠক শেষে সভাধিপতি বলেন, ‘‘দাদার অনুগামীর পোস্টার আমি দিইনি। মধু ফ্যান ক্লাবের নামে পুজো ও উৎসবকে সামনে রেখে কিছু পোস্টার দেওয়া হয়েছিল। তাতে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি ছিল। তিনি এখন আমাদের দলে নেই। তাই সেই পোস্টার খুলে নতুন পোস্টার লাগানো হবে।’’
প্রসঙ্গত জেলাপরিষদের প্রয়াত কর্মাধ্যক্ষ মফেজুদ্দিন মণ্ডলের স্মরণসভাকে কেন্দ্র করে দলে আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়েছিল। দলের ব্যানার ছাড়া শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে স্মরণসভার আয়োজন করেছিলেন সভাধিপতি ও তাঁর অনুগামীরা। দলের ব্যানার ছাড়া স্মরণসভা আটকাতে জেলা তৃণমূল সভাপতি সে সময় জেলা পরিষদের সদস্য ও বিধায়কদের বৈঠক ডেকেছিলেন। দলকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেদিনের সভায় সভাধিপতি, সহকারি সভাধিপতি, একাধিক কর্মাধ্যক্ষসহ অধিকাংশ জেলা পরিষদ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু এই একমাসে জল অনেক দূর গড়িয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী অন্য দলে নাম লিখিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অনুগামীরা ধীরে চল নীতি নিয়ে দলের সঙ্গে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তবে দলের, এককাট্টা চিত্র ভোটে বজায় থাকবে কি না ভবিষ্যৎ বলবে।