উদ্ধার হওয়া মোটরবাইক ও সাইকেল। ছবি: নিজস্ব চিত্র
সিমেন্ট, হার্ডঅয়্যার ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল চোরাই মোটরবাইক ও সাইকেল কেনাবেচার কারবার। শনিবার রাতে হাজারপুরে এক ব্যবসায়ীর গুদামঘরে হানা দিয়ে ১০১টি মোটরবাইক ও ২৪০টি সাইকেল বাজেয়াপ্ত করল ফরাক্কা থানার পুলিশ। উদ্ধার হওয়া সাইকেলের মধ্যে ৬০টি ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের।
উদ্ধারের পর আটক বাইক ও সাইকেল ফরাক্কা থানায় নিয়ে যেতে গিয়ে রীতিমতো নাকাল হতে হয় পুলিশকে। রাতেই তিনটি বড় লরি ভাড়া করে জনাদশেক শ্রমিককে দিয়ে দফায় দফায় থানায় নিয়ে যেতে হয় আটক বাইক ও সাইকেল। ততক্ষণে রাত কাবার হয়ে ভোর। অভিযুক্ত ব্যবসায়ী পলাশ দাসকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের সন্দেহ, এই কারবারে পলাশের আরও কয়েকজন আত্মীয় জড়িত। এতে যুক্ত আরও অনেকে। এলাকার অন্যত্রও তাদের চোরাই বাইক লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলির খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
ফরাক্কার একদিকে কালিয়াচক, অন্যদিকে বাংলাদেশ। পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড। স্থানিক সুবিধার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে চোরাই বাইক এনে জড়ো করা হত ফরাক্কায়। সস্তায় সেই বাইক কেনাবেচা চলত। গত বছর ফরাক্কায় সত্তরটির বেশি চোরাই বাইক উদ্ধার হয়েছিল। কয়েক দফায় বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে পুলিশ সেগুলি পায়। এমনকি, পুলিশের তরফে গ্রামে গ্রামে বার্তা পাঠানো হয়েছিল, কারও কাছে চোরাই বাইক থাকলে তিনি যেন তা থানায় জমা দেন। এভাবে বহু চোরাই বাইক উদ্ধার হয়েছিল।
কিন্তু এক সঙ্গে এত সংখ্যায় বাইক উদ্ধারের নজির এ রাজ্যে সম্ভবত প্রথম। হাজারপুরে ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে উদ্ধার হওয়া বাইকের মধ্যে মালদহ, বীরভূম, ঝাড়খণ্ড, এমনকী কলকাতার নম্বরও রয়েছে। রয়েছে বহু নম্বরহীন বাইকও। এ নিয়ে এলাকায় চাপা গুঞ্জন ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সূত্রে খবর আসছিল পুলিশের কাছে নয়নসুখ পঞ্চায়েতের কোথাও বিপুল সংখ্যায় চোরাই বাইক মজুত করে রাখা রয়েছে। সস্তায় সে সব বাইক কেনাবেচা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই শনিবার পুলিশ সেখানে হানা দেয়।
এদিকে, বিপুল সংখ্যায় বাইক উদ্ধারের খবর পেয়ে ঝাড়খণ্ড ও ফরাক্কার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বহু মানুষ ফরাক্কা থানায় হাজির হন। উদ্ধার হওয়া বাইকের মধ্যে নিজের বাইক দেখে চিনতে পারেন তিনজন। ফরাক্কার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ জানান, উদ্ধার হওয়া ১০১টি বাইকের মধ্যে ৬১টি বাইরে থেকে আসা চোরাই বাইক বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। বাকি ৪০টি বাইকের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর বৈধ হলেও সেগুলি কীভাবে গুদামে মজুত হল, তার প্রমাণ মেলেনি।