কড়া কথায় কাজ, বাড়ি ভাঙলেন জবরদখলকারীরা

দমবন্ধ শহরে স্বস্তির বাতাস আনতে এ বার পথে নামল পুরসভা। জবরদখলকারীদের হটিয়ে রাস্তা সম্প্রসাণের কাজে হাত দিল তারা। জমি উদ্ধারে পাশে পেলেন সহযোগী কাউন্সিলরদেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

চলছে বাড়ি ভেঙে ফেলার কাজ। — নিজস্ব চিত্র

দমবন্ধ শহরে স্বস্তির বাতাস আনতে এ বার পথে নামল পুরসভা। জবরদখলকারীদের হটিয়ে রাস্তা সম্প্রসাণের কাজে হাত দিল তারা। জমি উদ্ধারে পাশে পেলেন সহযোগী কাউন্সিলরদেরও।

Advertisement

দফায় দফায় বৈঠক, এলাকায় গিয়ে প্রচার, মাইকের ঘোষণা। বাদ যায়নি কোনও কিছুই। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে উঠে পড়ে লেগেছিলেন ধুলিয়ান পুরসভার পুরপ্রধান সুবল সাহা। তিনি জবরদখল উচ্ছেদ করে লালপুরের বাইপাস রাস্তার সম্প্রসারণে এলাকায় মাটি খোঁড়ার যন্ত্র নিয়ে গিয়ে জবরদখল উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিতেও কসুর করেননি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি জমি জবরদখলের বিরুদ্ধে কড়া বার্তায় সেই কাজ সহজ হয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় ৯০ শতাংশ জবরদখলকারী বাড়িঘর ভেঙে জমি ছেড়ে দিয়েছেন। রাস্তা তৈরি এখন তাই সময়ের অপেক্ষা।

শতবর্ষ পুরনো ধুলিয়ানে ঢোকার একাধিক রাস্তাই গত কয়েক দশক ধরে একে একে জবরদখল হয়ে গিয়েছে। ফলে শহরের একমাত্র রাস্তায় যানজট নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে। সকাল বিকেল যান নিয়ন্ত্রণ করেও সমস্যার সমাধান মেলেনি। তাই শহরে বার বার দাবি উঠেছে জবরদখল সরিয়ে বাইপাস সড়কগুলিকে সংস্কার করে তা চালু করার। কংগ্রেস, সিপিএম তৃণমূলের একাধিক পুরবোর্ড আগে ক্ষমতায় এলেও গা করেনি কেউই। শেষমেশ বর্তমান পুরবোর্ড শহরে যানজট কমাতে লালপুরের বাইপাস সড়কটি চালুর উদ্যোগ নেয়।

Advertisement

সিজে প্যাটেল মোড় থেকে পাহাড়ঘাটি পর্যন্ত ১২০০ মিটারের এই সড়কটি সরাসরি কাঁকুড়িয়া হয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে গিয়ে উঠেছে। এই পথে যানজট এড়িয়ে দ্রুত জাতীয় সড়কে পৌঁছে যাওয়া যাবে তাই নয়, রাস্তা কমে যাবে প্রায় ছয় কিলোমিটার।

একসময় ৭, ১৩, ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের উপর দিয়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে ৫ মিটার চওড়া এই সড়কটি যথেষ্ট চালু ছিল। লরি পর্যন্ত যেতে পারত এই সড়ক ধরে। কিন্তু জবরদখল হতে হতে সেই রাস্তার পরিসর কমে এসেছিল বর্তমানে দেড় মিটারে। ফলে গাড়ি তো দূর, সাইকেলে ও রিকশার পথ চলাও হয়ে উঠেছিল দুঃসাধ্য।

পুরপ্রধান জানান, বছর খানেক আগে ধুলিয়ানের দায়িত্ব নেওয়ার সময়ই শহরের সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল লালপুরের বাইপাস সড়কটিকে ফের চালু করার। পুরসভার কাউন্সিলররাও সমস্যাটিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই সড়ক সংস্কারে স্বেচ্ছায় জবরদখল মুক্তি সম্ভব হয়েছে।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জেকাত আলি বলেন, “আগে রাস্তা ব্যবহার হত না। তাই কিছুটা ছাদের কার্নিশ বাড়ানো হয়। এখন রাস্তা চওড়া হলে বড় গাড়ি যাবে সে রাস্তায়। তাই পুরপ্রধানের আবেদনে সাড়া দিতে বাড়ির দু’ফুট কার্নিশ ভেঙে নিয়েছি।”

১৮ নম্বরের মুদির দোকানদার সেন্টু শেখ বলেন, “দোকানে জায়গা কম। তাই ঘর বাড়িয়েছিলাম কিছুটা। সড়ক বাড়লে এলাকায় যোগাযোগ বাড়বে। তাই আর আপত্তি করিনি। বাকি অংশ ভেঙে নিয়েছি।”

বাদ পড়েননি ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বসুমতী সিংহও। তাঁর কথায়, “বাম আমলেও একবার চেষ্টা হয়েছিল লালপুরের বাইপাস সড়কটিকে জবরদখল মুক্ত করার। পরে সিপিএমের নেতাদের চাপে তা ধামা চাপা পড়ে যায়। এলাকার সব জবরদখলকারীকে আমিই বা বলি কী করে অন্যরা সরে যাক। তাই আমিও নিজেই ভেঙে নিয়েছি বাড়ির বাড়তি অংশটুকু।”

পুরপ্রধান তৃণমূলের সুবলবাবু বলেন, ‘‘জবরদখল তোলার সময় সিপিএম বাধা দিয়েছে। এমনকী বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা। কিন্তু আমি সিপিএম নেতাদের বলেছি রাস্তা বাড়াতে হবে। জবরদখলের কারণেই নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়েছে শহরের।”

সিপিএমের জোনাল কমিটির সদস্য মহম্মদ আজাদ বলেন, “আমরা উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ চলবে না। সর্বদলীয় সভা ডেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পুরসভাকে। কিন্তু তারা তা করেনি।”

পুরপ্রধান অবশ্য সাফ জানান, পুরসভা কোনও নতুন রাস্তা করছে না। শহরকে যানজট মুক্ত করতে পুরোনো বাইপাসগুলিকেই জবরদখল মুক্ত করে তা চালু করতে চাইছে। তাই ক্ষতিপূরণের প্রশ্ন আসে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement