জল ঠেলে যাওয়া-আসা। — ফাইল চিত্র
বেহাল নিকাশির কারণে ফি বছর জলে ডোবে করিমপুর। হাঁটু জল ঠেলে স্কুলে যেতে হয় খুদেদের। জল ঠেলে হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনলে ভিরমি খান খোদ রোগী। প্রতি বছর তাই বর্ষাকাল এলে মাথাব্যথা বাড়ে করিমপুরের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েত, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই সামান্য বৃষ্টিতে বানভাসি হয় গোটা করিমপুর।
আনন্দপল্লির বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব সত্যেন বিশ্বাস বলেন, “বাড়ি-ঘরের সংখ্যা অনেক বাড়লেও নিকাশি ব্যবস্থা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তাই সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা জলে ডুবে যায়। ঘরে জল ঢোকে।’’
একই অভিযোগ রামকৃষ্ণপল্লির অসীম লাহিড়ী বা জয়নাল শেখের। তাঁদের কথায়, “বাড়ির ভিতরেও জল ভরে যায়। সাপ-পোকামাকড়ের উৎপাত বাড়ে। জল ঠেলে বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না। ওদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় লাগে।’’
শুধু রাস্তা নয়। বর্ষার জলে ভরে যায় করিমপুরের খেলার একমাত্র মাঠ রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠ। সমস্যায় পড়তে হয় খেলোয়াড়দের, প্রাতঃভ্রমণকারীদের। সমস্যার কথা চেপে রাখেননি করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক সুজিত বিশ্বাস। তিনি বলেন, “মাঠের পাশেই পুকুর রয়েছে। মাটের জমা জল সেই পুকুরে গিয়ে পড়ত। এখন যাঁরা ওই পুকুর দেখভালের দায়িত্বে তাঁরা জল নামার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। যে কারণে মাঠের জমা জল আর নামতে পারে না। সমস্যার কথা সবাইকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।”
সমস্যায় পড়েন করিমপুর গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে রোগী, রোগীর আত্মীয়েরাও। এলাকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার ভরসা এই হাসপাতাল। সেই হাসপাতালের ঢোকার পথ থেকে শুরু করে সামনে ও পাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বর্ষার সময় জলের নীচে চলে যায়। অভিযোগ, নিকাশি নালা থাকলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলো আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। হাসপাতাল সুপার রাজীব ঘোষ বলেন, “চারপাশে এখন অনেক নতুন নতুন উঁচু বাড়ি তৈরি হয়েছে। তুলনায় হাসপাতাল এলাকা বেশ নিচু জায়গায়। তাই আশেপাশের জল এসে হাসপাতাল চত্বরে এসে জমে।’’ তিনি জানান, গত বছর হাসপাতালের সামনের রাস্তা উঁচু করা হয়েছে। তাতে খানিক সুরাহা হয়েছে। তবে বর্ষাকালের সমস্যার কথা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। বর্ষার আগে সমাধানের কোনও ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই চেষ্টা তিনি করবেন।
কী বলছে পঞ্চায়েত?
করিমপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তারক সরখেল জানান, “প্রায় আঠারো লক্ষ টাকা ব্যয় করে নিকাশি নালা তৈরি করছে পঞ্চায়েত। সে কাজ শেষ হলে আর বৃষ্টির জল দাঁড়াবে না।’’ তবে তিনি জানান, রামকৃষ্ণপল্লিতে নতুন নালা তৈরির ক্ষমতা পঞ্চায়েতের নেই। তাই যে নালাগুলি এখন রয়েছে সেগুলিই মেরামত করা হবে। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জল জমে যাওয়ার কথা ভেবে সাধ্যমতো একটা পাম্পসেট রাখা হবে। জল জমলে সেই পাম্প দিয়ে জল অন্যত্র ছেঁকে ফেলা হবে।
একই কথা জানান করিমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান জ্যোৎস্না শর্মা। তিনি জানান, পঞ্চায়েত এলাকার লক্ষ্মীপাড়া, বেলতলা মাঠ, হালদারপাড়া ও আনন্দপল্লির কিছু জায়গায় জল জমে। ওই এলাকাগুলিতে বড় নালা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তুকারের সঙ্গে এই বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে সেগুলি সম্পন্ন করা হবে। করিমপুর-১ বিডিও সুরজিত ঘোষ বলেন, “বর্ষার আগেই পঞ্চায়েত গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জল নিকাশির জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”