পাশাপাশি শুয়ে রক্ত দিলেন হাজিকুল ও বিশ্বজিৎ। নিজস্ব চিত্র
রোজার উপবাসে ছিলেন জুম্মা মসজিদের ইমাম। লোকনাথ মন্দিরের পুরোহিতও ছিলেন মা কালীর অমাবস্যার উপবাসে। তাঁরা দু’জনেই উপবাস থাকা অবস্থায় পরস্পরের হাত ধরে রক্তদান করেন বুধবার। লালগোলা থানা প্রাঙ্গণে পুলিশের পক্ষ থেকে আয়োজিত শিবিরের রক্তদান করেন তাঁরা। তাঁদের রক্তদানের ঘটনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রোজা রাখা অবস্থায় ওই শিবিরেই আরও এক যুবক রক্ত দান করেন। তিনি লালগোলা থানার ছাইতুনি গ্রামের বেকার যুবক হাজিকুল শেখ। এ দিন রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দেন লালগোলা থানার রাজানগর গ্রামের জুম্মা মসজিদের ইমাম তথা, মৌলবি ইমামুদ্দিন বিশ্বাস। ভোর থেকে রোজার মতোই নিরম্বু উপবাস থাকা অবস্থায় রক্ত দেন শ্রীমন্তপুর গ্রামের লোকনাথ মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বজিৎ পাঠক।
প্রয়োজনে রোজার উপবাস ভেঙে সম্প্রতি অনেকেই রক্তদান করেছেন। কিন্তু রোজার উপবাস থাকা অবস্থায় কোনও পুরোহিতের হাতে হাত রেখে ইমামের রক্ত দানের ঘটনা সম্ভবত এখন পর্যন্ত এই প্রথম। ইমাম, তথা মৌলবি ইমামুদ্দিন বিশ্বাসের কথা, ‘‘আমি রক্ত দিয়েছি মাত্র। তার জন্য বাইরে থেকে আমি দেহে কোনও জিনিস গ্রহণ করিনি। ফলে রোজার উপবাস না ভেঙেও আমার দেওয়া রক্তে কোনও বিপন্ন মানুষের উপকারে লাগলে আমার ভালই লাগবে। শারীরিক অবস্থার অসুবিধা না করে রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মে, বা হাদিসে কোনও বাধা নেই। শারারিক, বা মানসিক কোনও অসুবিধাও
আমার হয়নি।’’
এ দিন ভোর থেকে অমাবস্যার উপবাসে ছিলেন পুরোহিত বিশ্বজিৎ পাঠকও। পঞ্জিকা মেনে রাত ১টা বেজে ৫১ মনিটি তিনি উপবাস ভাঙবেন। পুরোহিত বলেন, ‘‘সেই উপবাসের জন্য রক্ত দিতে আমার কোনও রকম শারীরিক অসুবিধা ঘটেনি।’’ লালগোলার আইড়মারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘উপবাস ক্লিষ্ট অবস্থায় রক্তদান ঝুঁকি পূর্ণ। না দেওয়ায় ভাল। কিন্তু ওঁদের মানসিক জোরের কাছে শারীরিক দুর্বলতা হার মেনেছে।’’ পুরোহিত ও মৌলবি দু’ জনেই বলেন, ‘‘গ্রীষ্মকালে হাসপাতালে বরাবর রক্তের অভাব দেখা দেয়। তখন মানুষের বিপন্নতা বাড়ে। আমাদের কাছে নারী ও পুরুষ ছাড়া মানুষের মধ্যে অন্য কোনও ভাগ বিভাগ নেই। তাই গ্রীষ্মকালীন অভাব মেটাতে আমাদের ওই রক্তদান।’’ অন্য ৭৮ জনের সঙ্গে উপবাস ক্লিষ্ট ওই তিন জনেরও এ দিন রক্ত সংগ্রহ করে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক দল।
৩৮ বছরের ওই ইমামের বাড়ি লালগোলা থানা এলাকার পাইকপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রাজানগর গ্রামে। মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি মাদ্রাসা থেকে মৌলবি পাশ করেন। ২ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে মৌলবির ৬ জনের সংসার। মসজিদের ইমামের কাজ ছাড়াও মিলাদ করে ও সামান্য কিছু জমিতে চাষ করে তাঁর সংসার চলে। ৩৬ বছরের অবিবাহিত যুবক বিশ্বজিৎ পাঠক লোকনাথ মন্দিরের পুরোহিতের পাশাপাশি লালগোলা এমএন অ্যাকাডেমির হাইস্কুলের প্রহরীর চাকরিও করেন। তাঁরা দু’ জনেই বলেন, ‘‘এই সময়ে দু’জন দু’জনের হাতে হাত রেখে রক্ত দিয়ে সমন্বয়ের বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি। এর আগেও পৃথক ভাবে রক্তদান করেছি। রক্ত দিতে অন্যদের উৎসাহিতও করে থাকি।’’