BSF

পদ্মার বুকে ঝলসে উঠছে গরুর শিং

বিএসএফ সূত্র বলছে এ দেশের ৫৬০ টাকার বোতল ও পাড়ে দু-আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। পাচারের পথে নদী-ভাসি গরুর শিঙে মোবাইল বাঁধার এক অভিনব রাহিনীও শুনিয়েছেন বিএসএফের কমান্ডান্ট বিজয় কুমার সিংহ

Advertisement

বিমান হাজরা

জঙ্গিপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৪১
Share:

খালি সিলিন্ডারে কাশির সিরাপ। নিজস্ব চিত্র

কালু শেখের বুদ্ধির তারিফ করতে হয়! বাহুরা ক্যাম্পের বিএসএফ জওয়ানেরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন চর পিরোজপুরের ওই আনপড় যুবকের চাতুর্যে।
বছরের পর বছর প্রহরা দিয়ে সীমান্তের গাঁ-গঞ্জের মানুষজনের সঙ্গে একটা চোখের আলাপ হয়ে য়ায় কর্তব্যরত জওয়ানদের। কালুর সঙ্গেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্যাম্পে তার যাতায়াতও অবাধ হয়ে উঠেছিল। তবু পোড় খাওয়া আধাসেনারা অপরাধের একটা চোরা ঘ্রাণ বুঝি পান। আর তা পেয়েছিলেন বলেই সে দিন কালুর মোটরবাইক থামিয়ে ক্যারিয়ারে বাঁধা পেল্লাই সিলিন্ডারের ভিতর কী রয়েছে জানতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আর তাতেই ঘাবড়ে গিয়ে মোটরবাইক ফেলে এক দৌড়ে সীমান্তের মাঠ পেরিয়ে গিয়েছিল কালু। আর বাইকের পিছনে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা সিলিন্ডার নামিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বিএসএপের জওয়ানেরা। সিলিন্ডারের পিছনে প্রমাণ মাপের একটা নিখুঁত গর্ত পাতলা টিনের মোড়ক দিয়ে ঝালাই করা। তা কাটতেই বেরিয়ে পড়ে থরে থরে সাজানো মদের বোতল। বাংলাদেশে প্রকাশ্য়ে মদ বিক্রি বেআইনি। হোটেল এবং কতিপয় ক্লাব ছাড়া সেখানে মদের চলন নেই। চোরাপথে এ ভাবেই এ দেশে থেকে মদ পাচার হয় ও পাড়ে। তার পর তা ছড়িয়ে পড়ে গঞ্জ-শহরে। চড়া দামে তা বিক্রি হয় চুপিসারে। বিএসএফ সূত্র বলছে এ দেশের ৫৬০ টাকার বোতল ও পাড়ে দু-আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
পাচারের পথে নদী-ভাসি গরুর শিঙে মোবাইল বাঁধার এক অভিনব রাহিনীও শুনিয়েছেন বিএসএফের কমান্ডান্ট বিজয় কুমার সিংহ। সম্প্রতি ভরা পদ্মায় খান পনেরো গরু উদ্ধারের পরে বিএসএফ কর্মীরা দেখেন, প্রায় সব ক’টি গরুর শিঙেই পলিথিনের প্য়াকে জড়ানো সস্তার মোবাইল। মোবাইল রয়েছে সাইলেন্ট মোডে, অর্থাৎ বেঝে উঠবে না, কিন্তু সে মোবাইলে রিং করলে ঝলমল করে জ্বলে উঠছে আলে।
পাচারকারীদের জেরা করে বিএসএফ জানতে পারে, ওই আলোই হল পাচারের দিশারী। ও পাড়ে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করা পাচারকারীরা ফোনে রিং করে দেখে নেন নদীর বুকে আলো জ্বলে উঠল কি না! আর সেই আলোর রেখা ধরেই এ গিয়ে গিয়ে তারা উদ্ধার করেন চর থেকে পদ্মায় ভাসিয়ে দেওয়া ‘পেপসি’ কিংবা ‘কোক’ অর্থা ছোট বাছুর কিংবা বড় মাপের গরু! সীমান্ত এ নামেই চেনে পাচার হয়ে যাওয়া গরু-বাছুরকে।
কমান্ডান্ট বিজয় কুমার বলছেন, ‘‘আসলে প্রথম দিকে আমরাও পাচারের নতুনরকমফের ধরতে পারি না। কিন্তু এক সময়ে ধরা পড়ে য়া। তখন ওরা (পাচারকারী) নয়া কোনও কৌশল বের করে। এই বুদ্ধির খেলাটা চলতেই থাকে!’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement