ভেষজ রঙে রঙিন রঘুনাথ-প্রগতির বিবাহবাসর। —নিজস্ব চিত্র।
পরিবেশবান্ধব রং দিয়ে সারা হল বিয়ের অনুষ্ঠান। ফল থেকে তৈরি রং দিয়ে রাঙানো হল কনের ঠোঁট। আবার তা দিয়েই হল সিঁদুরদান। খাবারেও সেই পরিবেশবান্ধব রঙের ছোঁয়া। শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনই অবাক বিবাহ অভিযানের সাক্ষী থাকলেন নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে বহু দিন ধরে চলে আসা নানা প্রথাও ভাঙা হল এই বিয়েতে।
শান্তিপুরের বাসিন্দা রঘুনাথ কর্মকার এবং প্রগতি চণ্ডীর বিয়ের আসর বসেছিল শুক্রবার সন্ধ্যায়। সেই বিয়েতেই ধরা পড়ল এমন নানা প্রাকৃতিক রঙের উপস্থিতি। অতিথি আপ্যায়ন থেকে বিদায়— সব কিছুতেই অন্য বার্তা দিল এই বিয়ে। মাটির ভাঁড়ে চা, খাবারের মেনুতেও রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকমুক্ত আনাজ, মশলাপাতি, মাছ, মাংস এমন নানা উপকরণ ছিল ওই বিয়েতে।
পাত্র রঘুনাথ শান্তিপুরের বিজ্ঞানকর্মী। প্রগতি ভেষজ খাদ্যদ্রব্য এবং প্রসাধনী উৎপাদক গোষ্ঠীর সদস্য। মাস ছয়েক আগে তাঁদের বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। তখন অবশ্য ঠিকুজিকুষ্ঠি নয়, রক্তের নানা পরীক্ষা করার পর দু’জনের বিয়ে স্থির হয়। শুক্রবার বিয়ের আসরে মালাবদল এবং সিঁদুরদান সব আচারই পালন করা হল, তবে ভিন্ন ভাবে। উপস্থিত ছিলেন না কোনও পুরোহিত। সিঁদুরি গাছের ফল থেকে তৈরি সিঁদুর দিয়ে সারা হয় সিঁদুরদান পর্ব। এই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম বিক্সা অরিলেনা। ভেনেজুয়েলা এবং আমেরিকায় গাছটি আনোত্তো নামে পরিচিত। সেই গাছকেই এ দেশে লোকে চেনে ‘সিঁদুরি গাছ’ নামে। অতিথিদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় সেই গাছের ফল। তাঁদের বোঝানো হয় ওই ফলের উপকারিতাও। প্রগতির কথায়, ‘‘বাবা রাসায়নিক সারমুক্ত শাকসব্জি তৈরি করেন। বাবাকে সম্মান জানাতেই এই বিয়েতে ফল ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটা নতুনত্ব রয়েছে। আমি এটা সমর্থন করেছি। অন্য রকম ভাবে আমাদের বিয়ে হচ্ছে।’’
পাত্র রঘুনাথের কথায়, ‘‘যে চেতনায় আমি বিশ্বাস করি, তারই প্রতিফলন ঘটেছে আমাদের বিয়েতে। কন্যা দানের বস্তু নয়। তাই আমাদের বিয়েতে কন্যাদান হয়নি। বিয়েতে নারীকে নানা ভাবে অসম্মান করা হয়। কী ভাবে সেই অসম্মান করা হয় তা আমরা ভিডিয়োর মাধ্যমে তুলে ধরব। আমরা চাই মানুষের মধ্যে এই চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক।’’