এক সময়ে বেশ নামধাম ছিল। কম খরচে চিকিৎসা মিলত। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসতেন অস্ত্রোপচার করাতে। এমনকী উত্তরবঙ্গ থেকেও। শুধুমাত্র বক্ষ আর হৃদরোগের জন্য আস্ত একটা সরকারি হাসপাতাল যে রাজ্যের আর কোথাও নেই।
কিন্তু দেড় দশকে কল্যাণীর গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের এ হেন সুনামে মরচে ধরে গিয়েছিল। সাড়ে তিনশো শয্যার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েক বছর। শেষবার ওপেন হার্ট সার্জারি হয় সেই ১৯৯৯ সালে। দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, অ্যাঞ্জিওগ্রাম, স্টেন্ট বসানোর কাজও।
চ্যালেঞ্জটা ছিল পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা। নতুন বছরে সেই লক্ষ্যে অনেকটাই সফল গাঁধী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চার দিন আগে এই হাসপাতালে সফল হয়েছে করোনারি বাইপাস অস্ত্রোপচার। গাঁধীর ইতিহাসে এই অস্ত্রোপচার কখনও হয়নি। ফলে এটা হাসপাতালের সাফল্যের টুপিতে নতুন পালক। গত মাসে পাঁচটি ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। নিয়মিত চলছে স্টেন্ট বসানো। আর এই সব কিছুই হচ্ছে পুরোপুরি নিখরচায়। রোগীরা যেখানে এমুখোই হচ্ছিলেন না, সেখানে গত এক মাসে হাসপাতালের আড়াইশো শয্যাই প্রায় সব সময় ভর্তি।
এ দিকে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত এই হাসপাতালে কয়েক মাস আগে ৫০টি শয্যাতেও রোগী থাকত না। জেলার কোনও হাসপাতাল থেকে রোগীদের এই হাসপাতালে রেফার করা হলে, বাড়ির লোকই বলে উঠতেন, ‘‘আর যাই হোক গাঁধীতে নয়। অন্য অন্য কোথাও পাঠান।’’
হাসপাতালের সুনাম ফেরাতে বেশ কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে এই হাসপাতালকে কল্যাণীর জেএনএম মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সুবিকাশ বিশ্বাস জানান, সরকার এই হাসপাতালটির সুনাম ফেরাতে বদ্ধপরিকর। তার জন্য সব ধরনের সাহায্য পাওয়া যাবে বলা হয়েছে। গত মাসে হুগলী জেলার মগরার ৭৬ বছরের বৃদ্ধের ওপেন হার্ট সার্জারি দিয়ে অস্ত্রোপচার শুরু হয়। বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। তার পরে আরও চারটি ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। সকলেই সুস্থ রয়েছেন। গত এক মাসে অ্যাঞ্জিওগ্রাফি হয়েছে ৩১ জন রোগীর। পেস মেকার বসেছে ২১ জন রোগীর। হৃদরোগের যে কোনও অস্ত্রপচার বেসরকারি হাসপাতালে করতে গেলে ন্যূনতম দেড়-দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়। এখানে তা হচ্ছে সম্পূর্ণ নিখরচায়।