—নিজস্ব চিত্র
কাঁধে কালো ব্যাগ। খাকি পোশাক পরে বিড়িতে সুখটান দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে টেক্সটাইল কলেজের দিকে হাঁটছিলেন নবগ্রাম থানার হোমগার্ড মীর মতি।
কোর্ট বাজারের সামনে আসতেই স্বাস্থ্যদফতর আর পুলিশের লোকজন পথ আটকালেন। হকচকিয়ে মতি বিড়িটা মাটিতে ফেলে নেভানোর আগেই জরিমানা ধার্য হল, পঞ্চাশ টাকা। কেন? প্রকাশ্যে ধূমপান।
“স্যর ভুল হয়ে গেছে’’ বলে একটা দেওয়াল তোলার চেষ্টা করেছিলেন বটে তবে ধোপে টেঁকেনি।
টেক্সটাইল কলেজের সামনে একটি পান বিড়ির দোকানের সামনে সবে সিগারেটে মুখ লাগিয়েছেন মোড়গ্রামের কাঞ্চন মজুমদার। সঙ্গে-সঙ্গে অভিযানকারীরা ঘিরে ফেলেন। জরিমানা হয়। আপত্তিটা তিনিও তুলেছিলেন, ‘এটা কী করে পাবলিক প্লেস হয়!’ উত্তর এসেছিল, ‘হয় বইকী!’ কিন্তু কেন হল, তা নিয়েই আবার প্যাঁচ কষেছেন ধূমপানের দায়ে ধৃতদের কয়েক জন। কেন?
তাঁদের যুক্তি, ব্যাঙ্ক, স্টেশন, স্কুল-কলেজ, বাসে-ট্রেনে সিগারেট বা বিড়ি খাওয়ায় উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকতে পারে, কিন্তু রাস্তায় বা খোলা মাঠে কেউ ধূমপান করলে তাঁকে কেন আটকানো হবে? স্বাস্থ্য কর্তাদেরই একাংশের মতে, ‘পাবলিক প্লেস’ বা জনপরিসর কথাটাই যত গন্ডগোল পাকিয়েছে। ২০০৩ সালের সিগারেট ও অন্য তামাকজাত দ্রব্য-রোধ আইনে ‘পাবলিক প্লেস’ অর্থাৎ জনপরিসরে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তা বলবৎ করতে গিয়ে ‘জনপরিসর’-এর সঙ্গে ‘প্রকাশ্য স্থান’ গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।
কাঞ্চনদের মতো অনেকেই এখন এই জরিমানা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায়ও বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে যে কাগজ আছে তাতে ‘পাবলিক প্লেস’ শব্দটুকুই বলা আছে, সেই বন্ধনীতে কোন-কোন জায়গা পড়ে তার স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা নেই। বুঝতে পারছি না ‘পাবলিক প্লেস’-এর মধ্যে রাস্তাঘাট, বাজারহাট সবই ধরব কি না!’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী অবশ্য স্পষ্টই বলছেন, ‘‘মাথার উপরে ছাদ থাকলে তবেই সেখানে ধূমপান অপরাধ। যেমন বাসস্টপে যদি ছাউনি থাকে, সেখানে সিগারেট খাওয়া চলবে না, কিন্তু ছাউনি না থাকলে অসুবিধা নেই। ফাঁকা রাস্তায় সিগারেট খাওয়াও তাই অপরাধ নয়।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরূপম বিশ্বাস অবশ্য এ সবে দমছেন না, ‘‘আমাদের কাছে যে কাগজপত্র এসেছে তাতে ‘প্রকাশ্য স্থানে’ ধূমপান নিষিদ্ধ বলা হয়েছে। ধরা যাক কেউ রাস্তায় সিগারেট খাচ্ছেন, তাঁর পাশে যদি অন্য কেউ হাঁটেন তা হলে তাঁর ক্ষতি হতে পারে। অতএব আমরা সেটা আটকাব।’’
আর তাই পুরনো ঘোষণা মতোই সপ্তাহের প্রথম দিন বহরমপুর শহরে ‘প্রকাশ্যে ধূমপান’ আটকাতে অভিযানে নেমেছিল জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশ। সোমবার বহরমপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাস, সমবায়িকা মোড়, বাজার চত্বর, টেক্সটাইল মোড়, ফৌজদারি কোর্ট মার্কেটের মতো একাধিক এলাকায় ঘুরে হাতেনাতে ১৫ জন ধুমপায়ীকে ধরা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে তৎক্ষণাৎ জরিমানা-বাবদ এক দিনেই ১৬০০ টাকা আদায়ও করা হয়েছে। তামাক সেবন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্যকর্তার যুক্তি, ধুমপায়ীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার সঙ্গেই ‘পরোক্ষ ধূমপায়ী’ অর্থাৎ তাঁদের আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁদেরও একই রকম স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকেই। মূলত সেটা আটকাতেই আইন তৈরি হয়েছে। বহরমপুরের মতো জেলা শহরে স্বাস্থ্য দফতর ও পুলিশ প্রকাশ্য স্থানে ধূমপান থামাতে উদ্যোগী হয়ে প্রশংসাও কুড়িয়েছে।