ভর্তি নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়তে গিয়ে হয়তো খানিক সমস্যার মুখেই পড়তে হবে ছাত্রছাত্রীদের। কারণ উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিকে এ বছর পাশের হার বেশি। পাশাপাশি, নম্বরও উঠেছে ভাল। তা দেখেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, ভাল প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে পড়ুয়াদের। কারণ সকলেই ছুটছে সে দিকে। আর ভাল নম্বর যে হেতু অনেকেই পেয়েছে, তাই প্রতিযোগিতা মারাত্মক। ফলে ভাল নম্বর পেয়েও ‘নামজাদা স্কুল’ ও ‘পছন্দের বিষয়’ জুটবে না অনেকেরই কপালে।
আর পাঁচটা জায়গার মতোই কৃষ্ণনগর শহর বা প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার ছাত্রছাত্রীরাও চায় তাদের এলাকার সেরা স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে। আর তাই ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির চাপ তৈরি হয়। এ বারও তার বিশেষ ব্যতিক্রম হবে বলে মনে করছেন না অনেকেই। তাঁদের কথায়, এমনিতে জেলায় যে সংখ্যক কলেজ ও স্কুল আছে তাতে ভর্তি নিয়ে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। জেলার অন্যতম নামি কলেজ কৃষ্ণনগর ডিএল কলেজ। এই কলেজের অধ্যক্ষ সাহাজাহান আলি বলেন,‘‘এই মুহর্তে আমাদের জেলায় কলেজের সংখ্যা ২২টি। গত বছরই তিনটি নতুন সরকারি কলেজ তৈরি হয়েছে। ফলে ভর্তি নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না। কারণ এ বার উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার মাত্র এক শতাংশ বেড়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অথচ আমি জানি গত বছরই এমন কলেজও আছে যেখানে অনার্সের আসন ফাঁকা পড়ে ছিল। ছাত্রছাত্রীদের বুঝে নিতে হবে যে সকলের পক্ষে তাদের পছন্দের কলেজে পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ হওয়া সম্ভব নয়।’’
বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের মতে, ছাত্রছাত্রীরা এটা বুঝতে চায় না বলেই সমস্যাটা তৈরি হয়।
কেমন? বেথুয়াডহরি কলেজের ভুগোল অনার্সে আসনের সংখ্যা ৬০টি। গত বছর এই বিষয়ে অনার্স নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল প্রায় তিনশো ছাত্রছাত্রী। আবার কৃষ্ণনগরের ডিএল কলেজে ভুগোলে অনার্সে আসনের সংখ্যা ৫৫টি। অথচ এই কলেজে এই বিষয়ে অনার্স নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিল প্রায় দু’হাজার ছাত্রছাত্রী। একই ভাবে বেথুয়াডহরি কলেজে বাংলা অনার্সে আসন সংখ্যা ৬০টি। আবেদন করেছিল প্রায় সাড়ে পাঁচশো। আর ডিএল কলেজে এই একই বিষয়ে আসন সংখ্যা ১১২ টি। কিন্তু আবেদন করেছিল প্রায় চার হাজার ছাত্রছাত্রী। সাহাজাহানবাবু আবার ‘অল বেঙ্গল প্রিন্সিপ্যাল কাউন্সিল’-এর কল্যাণী ইউনিভার্সিটি ইউনিটের সম্পাদক। তিনি বলেন,‘‘এ থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় ভর্তি নিয়ে আসল সমস্যাটা কোথায়। সকলেই চাইছে সব চাইতে ভাল কলেজে নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে পড়বে। দেখুন মুড়াগাছা সরকারি কলেজে ছাত্রের অভাবে অনার্সের আসন ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ ওই এলাকার ছেলেমেয়েরা এই বিষয়েই অনার্স নেওয়ার জন্য আমাদের কলেজে হত্যে দিয়ে পড়ে আছে।’’
একই কথা বলেছেন বেথুয়াডহরি কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অলোক দাস। তিনি বলেন, ‘‘এই মূহুর্তে আমাদের জেলায় যত সংখ্যক কলেজ আছে তাতে ভর্তি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। এমনকি অনার্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও না। তবে এমনও হতে পারে, যে কলেজে যে বিষয়ে অনার্স নিতে চাইছে সেই কলেজে হয়ত সেই বিষয়ে অনার্স পাবে না। অন্য বিষয়ে পাবে। আবার এমন হতে পারে যে ওই ছাত্র বা ছাত্রী তার চাহিদা মত বিষয়েই অনার্স পেল, তবে সেটা হয়ত অন্য কোনও কলেজে। এটাকে কখনই ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা বলা যেতে পারে না।’’
জেলার অন্য একটি বড় কলেজ মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন লাহিড়ী কলেজের অধ্যক্ষ সরজেন্দ্রনাথ কর। তিনি বলেন, ‘‘পাশের সংখ্যা এমন কিছু বাড়েনি, যে ভর্তি নিয়ে সমস্যা হবে। ছাত্রছাত্রীরা যদি মনে করে যে সে তার নিজের পছন্দের কলেজেই ভর্তি হবে, তা হলে তো সেটা হতে পারে না।’’
একই অবস্থা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়েও। জেলার বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা মনে করছেন, ভর্তি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাঁদেরও কথায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রায় সকলেই একটি বা দু’টি স্কুলে ভর্তি হতে চায়। তাতেই তৈরি হয় সমস্যা। কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই মুহর্তে আমাদের জেলায় ছাত্র ভর্তি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা না। সকলেই তার পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে না পারলেও কাছাকাছি স্কুলে ভর্তি হতে পারার কথা।’’ নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমলেন্দু সিংহরায় আবার ডিসট্রিক্ট লেবেল ইনেস্পেকশন টিমের সদস্য। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহুর্তে আমাদের জেলায় ২৪৬টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুল আছে। বিগত কয়েক বছরে ৫১ টি স্কুলকে নতুন করে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নিত করা হয়েছে। ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে ভর্তি পারছে না এমনটা কিন্তু হবে না।’’