নোট বাতিলের পরে প্রায় এক মাস হতে চলল। তবুও কপালে ভাঁজ সোনা কারবারিদের।
বহরমপুর থেকে বেলডাঙা— সর্বত্র এক অবস্থা। স্বর্ণশিল্পীরা জানান, এই ক’দিনে তাঁদের কাজ ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে। অগ্রহায়ণ, মাঘ ও ফাল্গুন বিয়ের মরসুম। স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও শিল্পীরা এই সময়ের দিকে তাকিয়ে সারা বছর ব্যবসা করেন। কিন্তু উল্টে এখন তাঁদের মাথায় হাত।
বেলডাঙা বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সম্পাদক অভিমন্যু কর্মকার বলেন, ‘‘আমাদের সমিতির সদস্য শ’পাঁচেক। তাঁরা শ’তিনেক দোকান চালান। ওই সব দোকানে কখনও কখনও বউনি পর্যন্ত হচ্ছে না। পুঁজি ভেঙে খেতে হচ্ছে।’’ বিয়ের মরসুমেও স্বর্ণশিল্পীরা কাজ পাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বেলডাঙার কয়েক হাজার পরিবার সঙ্কটে। কবে ফের বাজার উঠবে,
জানি না।’’
সোনাপট্টিরই রতন মণ্ডল জানান, প্রথমে কিছু দিন আমরা পুরনো নোট নিয়েছি। যত দিন আমাদের মহাজনরা পুরনো টাকা নিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তারা আর টাকা নিচ্ছে না।
গেরস্থেরা কী বলছেন? বহরমপুরের ধ্রুবজ্যোতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘২৭ অগ্রহায়ণ আমার মেয়ের বিয়ে। যতটা সোনা দেব ভেবেছিলাম, তা আর হল না। স্ত্রীর গয়না পালিশ করিয়ে এবং সামান্য কিনে বিয়ে হচ্ছে।’’ বেলডাঙার কালীতলা এলাকার সনাতন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার মেয়ের বিয়ে মাঘের প্রথম সপ্তাহে। অগ্রহায়ণ মাস পড়লে গয়না গড়াতে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন আর কী? কেউ এত টাকা ধার দিতে চাইছে না। ফলে বিয়ে বৈশাখে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু পাত্রপক্ষ তা মানতে চাইল না। বাধ্য হয়ে ধারে গয়না বানাতে দিলাম।’’
বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির বহরমপুর শাখা সম্পাদক গঙ্গাচরণ বসাকও বলেন, ‘‘যারা আগে গয়না তৈরি করিয়ে রেখেছিলেন, তাঁদের বাঁচোয়া। কিন্তু এখন যারা গয়না গড়িয়ে বিয়ে দেবেন ভেবেছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। কেউ বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছেন। কেউ আগের সোনা দিয়ে চালাচ্ছেন। এ ভাবে কি আমাদের চলে?’’