দ্বিখণ্ডিত

গেরুয়া ঝড় ঘিরে নিল রাজার গড়

নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস সহানুভূতির ভোট টেনে শেষরক্ষা করবেন ভেবেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তা মরীচিকাই রয়ে গিয়েছে। 

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৯ ০০:১৬
Share:

জয়ের হাসি: রানাঘাট কেন্দ্রে জিতলেন বিজেপির জগন্নাথ সরকার। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

সম্ভাবনা ছিলই। কিন্তু এতটা যে হবে, তা সম্ভবত বিজেপি নিজেও ভাবেনি। গেরুয়া ঝড়ে কার্যত রানাঘাট কেন্দ্রে উড়ে গেল তৃণমূল। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে অবশ্য দলের মুখরক্ষা করেছেন মহুয়া মৈত্র। ফলে লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে নদিয়া কার্যত আড়াআড়ি দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেল। বামেরা হয়ে গেল আক্ষরিক অর্থেই অপ্রাসঙ্গিক।

Advertisement

ভাগাভাগি স্পষ্ট বাকি দুই কেন্দ্রের আংশিক হিসেব ধরলেও। উত্তরে করিমপুর যে কেন্দ্রের মধ্যে পড়ছে, সেই মুর্শিদাবাদে জিতেছেন তৃণমূলের আবু তাহের। কিন্তু তার মধ্যেও ধাঁধা আছে। তৃণমূল জিতলেও করিমপুর থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ফলে সারা দিন সেখানে হা-হুতাশই শোনা গিয়েছে। দক্ষিণে বনগাঁ কেন্দ্রের অন্তর্গত দুই বিধানসভা কল্যাণী ও হরিণঘাটাতেও লিড পেয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের থেকে মতুয়া ভোট ভাঙিয়ে বনগাঁ কেন্দ্র জিতেছেন বিজেপির শান্তনু ঠাকুর।

তবে সবচেয়ে বড় বিস্ময় সম্ভবত রানাঘাট কেন্দ্র। বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে প্রার্থী নিয়ে টালবাহানা, শেষ পর্যন্ত দলের ঘোষিত প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর সরকারি চিকিৎসকের পদ থেকে ইস্তফা দিতে না পেরে ছিটকে যাওয়া এবং তাঁর জায়গায় বিকল্প হিসেবে দলের দক্ষিণ জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারকে দাঁড় করানো— কোনও কিছুই আটকাতে পারল না বিজেপিকে। নিহত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রূপালী বিশ্বাস সহানুভূতির ভোট টেনে শেষরক্ষা করবেন ভেবেছিলেন তৃণমূল নেতারা। তা মরীচিকাই রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

পাশের বনগাঁর মতো মতুয়া অধ্যুষিত এই কেন্দ্রেও বিজেপি যে জিততে পারে, তা অনেকেই আঁচ করছিলেন। বিশেষ করে তাহেরপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভায় জনস্রোত দেখার পরে। কিন্তু তা যে এই চেহারা নিতে পারে তা সম্ভবত বিজেপির সবচেয়ে বড় সমর্থকও ধারণা করেননি। প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে এই কেন্দ্রে জিতেছেন জগন্নাথ। অনেক পিছনে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল। রমা বিশ্বাসের মতো প্রার্থী দিয়েও বাম নেমে গিয়েছে সাত শতাংশের নীচে। কংগ্রেসের তো প্রায় মুছে যাওয়ার জোগাড়।

কৃষ্ণনগরে মহুয়া প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন। দৌড় শেষ করেছেন বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবের চেয়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে। কিন্তু সেখানেও আড়ে-বহরে যথেষ্ট বেড়েছে বিজেপি। হারলেও বিজেপির ভোট উঠে এসেছে ৪০ শতাংশের উপরে, যা তৃণমূলের পক্ষে রীতিমতো বিপদসঙ্কেত। কেননা এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে পরের ভোটে হিসেব পাল্টেও যেতে পারে।

কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে তৃণমূলকে কার্যত রক্ষা করেছে ৩৭ শতাংশ মুসলিম ভোট, যার একটা বড় অংশ পেয়েছেন মহুয়া। রানাঘাটে সেই জোরটা ছিল না তৃণমূলের। বরং নিম্নবর্ণের হিন্দু ভোট বিজেপির বাক্সে গিয়ে ভরাডুবি ঘটিয়ে দিয়েছে। সিপিএমের শান্তনু ঝায়ের মতো যোগ্য প্রার্থীও ৯ শতাংশের নীচে আটকে গিয়েছেন।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের গড়ে সবচেয়ে বড় যে বিভাজনটা ঘটে গিয়েছে তা হিন্দু আর মুসলিম ভোটের। মোদী-শাহেরা এসে ক্রমাগত এই ফাটলটা চওড়া করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। তাঁদের বাহিনীও তা অনুসরণ করছে।

দ্বিজেন্দ্রলাল-করুণানিধানের নদিয়া আপাতত দ্বিখণ্ডিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement