বড়ঞায় নয়া কমিটির বৈঠক।
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা প্রায় এক পক্ষকাল ধরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হেফাজতেই আছেন। এরই মধ্যে বিধায়ক না থাকায় বড়ঞা ব্লকের তৃণমূলের ‘ভাল-মন্দ’ কে দেখবে! সেটা নিয়েই চিন্তাই শাসক শিবির। তাই অবশেষে বিধায়কের অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তৃণমূলের জেলা কমিটি চার জন ব্লক নেতাকে নিয়ে একটি কোর কমিটি গঠন করল।
বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি শাওনি সিংহ রায় বলেন, “চার জনের একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিই মাথা হয়ে পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করবে।” শুক্রবার ওই কোর কমিটির পক্ষ থেকে অঞ্চল নেতৃত্বকে নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক হয়।
শাসক শিবির সূত্রে জানা যায়, বড়ঞা ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি হচ্ছেন রবীনকুমার ঘোষ, সহকারী সভাপতি মাহে আলম ও যুব সভাপতি সামশের দেওয়ান। কিন্তু তারপরেও ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির উন্নয়ন থেকে দলের সাংগঠিক বিষয়ে সবার উপরে বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ থেকেই কাজ করেছেন। জীবনকৃষ্ণের নেতৃত্বেই গত দেড় বছর ধরে বড়ঞা ব্লক তৃণমূল পরিচালিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগে গত ১৪ এপ্রিল চৈত্র সংক্রান্তির দিন দুপুরে সিবিআইয়ের কর্তা ব্যক্তিরা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে জীবনকৃষ্ণের আন্দির বাড়িতে তল্লাশি সঙ্গে জেরা শুরু করে।
পরে জীবনকৃষ্ণ নিজেই তাঁর ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন বাড়ির পিছনে ফেলে দেওয়া থেকে শুরু করে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। পরে ১৭ এপ্রিল মাঝরাতে নিজাম প্যালেস থেকে আরও একটি সিবিআই কর্তাদের প্রতিনিধি দল জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে এসে ভোরে জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে। মোবাইল খুঁজে পেতে সিবিআই পাম্পের মাধ্যমে পুকুরের জল ছেঁচে ফেলা, মোবাইলের খোঁজে তল্লাশি কী হয়নি। কার্যত ‘জীবননাট্যে’ পরিণত হয়েছিল।সে সব ভুলে গিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দলের বিধায়ক যখন শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে সেই সময় নিজেদের ঘর গোছাতে মরিয়া শাসক দল।
ইতিমধ্যেই বিরোধীরা কোমর বেঁধে প্রচারে নেমে পড়েছে, ‘যে দলের বিধায়ক দুর্নীতির জন্য গ্রেফতার হয়, সেই দলের অন্যরা কেমন?’ জীবনকৃষ্ণ গ্রেফতার হওয়ার পরে অনেক তৃণমূল কর্মী শাসক দল থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
তাই ওই ব্লকের দলের সাংগঠিন ভাবে মজবুত করার জন্য চার জনের কমিটি করে নিজেদের ঘর গোছাতে শুরু করেছে শাসক দল।
ওই কমিটির মধ্যে আছেন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রবীনকুমার ঘোষ, সহকারী সভাপতি মাহে আলম, আবুবাক্কার শেখ ও দেলবাহার শেখ।
মাহে আলম বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হয়ে লড়াই করতে হবে। সেটা নিয়েই একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছেন জেলা নেত্রী। আমরা সেই নির্দেশ মেনেই কাজ করছি।”
দলের জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায় বলেন, “বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ বর্তমানে আইনের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর অবর্তমানে বড়ঞা ব্লকে আমাদের দলের সংগঠন যাতে কোনও ভাবেই দুর্বল হয়ে না পড়ে, তার জন্যই চারজনের একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিই বড়ঞা ব্লকের সাংগঠনিক বিষয়টি দেখবে।”