উত্তরের জলের ধাক্কা লাগছে মুর্শিদাবাদে। ফরাক্কায় গঙ্গার জল সর্বোচ্চ বিপদসীমা ছাড়িয়ে অর্জুনপুর থেকে মহেশপুর পর্যন্ত কিছু এলাকায় ঢুকে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে জানিয়ে দিল জেলা সেচ দফতর।
ওই এলাকায় ইতিমধ্যেই গঙ্গার জল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় গঙ্গার পাড়ে বালির বস্তা ফেলে সেই গ্রামগুলিতে জল আটকানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে সেচ দফতর। গঙ্গার জল অবশ্য মালদহের পারদেওনাপুর, শোভাপুর দিয়ে ফরাক্কার কুলিদিয়ার ও হোসেনপুরের মতো চর এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। তবে ফরাক্কায় গঙ্গার জলস্তর এখনও সর্বোচ্চ সীমা ২২.৮৫ মিটারের সামান্য নীচে রয়েছে। সোমবার নিমতিতাতেও গঙ্গার জলস্তর ছিল ২০.১৫ মিটার। যা সর্বোচ্চ সীমার থেকে ৩৬ সেন্টিমিটার কম।
রাজ্য সেচ দফতরের গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধ বিভাগের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবিবার পটনায় গঙ্গার জলস্তর সর্বকালীন রেকর্ড ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল ৫০.২৮ মিটারে। পটনায় কখনও গঙ্গার জলস্তর এই সীমায় পৌঁছয়নি। ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ জলস্তর ছিল ৫০.২৭ মিটার। সোমবার থেকে পটনায় সে জলস্তর অবশ্য কমতে শুরু করেছে। কিন্তু রবিবারের জলের ঢল যে ভাবে ধেয়ে আসছে তা মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে ফরাক্কায় পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বাড়তি জল নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।” এ দিকে রবিবারের বৃষ্টিতে কান্দি পুরসভার ১১ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জল জমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বেহাল নিকাশির কারণে সামান্য বৃষ্টিতেও এমন হাল হয়। এ দিকে গঙ্গার জল বাড়তে থাকায় ফের ভাঙনের কবলে সামশেরগঞ্জের কামালপুর গ্রাম। পাথর বাঁধানো স্পার ইতিমধ্যেই ধসে গেছে গঙ্গায়। নতুন করে ধস শুরু হয়েছে সেখানে রবিবার রাত থেকে। ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে শুরু হওয়া এই ধস চিন্তায় ফেলেছে সেচ দফতরের কর্তাদেরও।
জানুয়ারি মাসেও কামালপুরে একই ভাবে ভাঙনে স্পার ধসে যায়।
গঙ্গায় ভেঙে পড়া বাড়ি থেকে সব জিনিসপত্র সরিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন মনিরুজ্জামান শেখ, সায়াদ সফি, মনিরা বিবিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রায় ৬-৭ ফুট দূরে নদী ছিল। কাল পর্যন্ত ভাবতে পারিনি এ ভাবে নদী এগিয়ে আসবে। মাঝ রাত্রে দেখি দেওয়াল কাঁপছে। তা থেকে ইট ভেঙে পড়ে ৩ বছরের ছেলের মাথায়। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। তার কান্নায় ঘুম ভাঙতেই দেখি এমন কাণ্ড।’’
ফরাক্কা ব্যারাজ সূত্রে খবর, সোমবার সন্ধ্যায় ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে ১৫ লক্ষ ১১ হাজার ৪৬৯ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। পরেও আরও জল ছাড়া হবে। সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তার ফলে বন্যা ও ভাঙনের সম্ভবনা আরও বাড়বে।’’