প্রশ্ন এমন পরিস্রুত জলের জার ঘিরে। নিজস্ব চিত্র
রাম-শ্যাম-যদু-মধু যতই পাণীয় জলের কারখানা খুলে বসুক, তাদের উপর নজরদারিতে সুডা নির্বিকার! কয়েক বছর আগে তারা একবার কারখানাগুলিকে চিঠি দিয়েছিল। অভিযোগ, এর পর আর তাদের উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। যদিও সুডার জেলা আধিকারিক বিনয় মাহাতো দাবি করেছেন, “কয়েকটি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে তদন্ত করা হচ্ছে।’’
কৃষ্ণনগর শহরের দুটি বড় সংস্থা এই মুহূর্তে জল বিক্রি করে থাকে। দু’টিই ঘূর্ণীর। প্রতিদিন তারা আড়াই থেকে তিন হাজার লিটার জল বিক্রি করে। এমনই এক সংস্থার কর্তা সঞ্জয় রায় বলেন, “আর ও মেশিনের মাধ্যমে আমরা জল ফিল্টার করে থাকি। জল অনুসন্ধান ও উন্নয়ন দফতরের অনুমোদনও আমাদের আছে।” অন্য একটি সংস্থার কর্তা পার্থ ঘোষও দাবি করেছেন, তাঁদের সংস্থার জল নিয়মিত ফিল্টার করা হয়, কিন্তু শোধনের পদ্ধতিটি কী সেটি স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কোন দফতর থেকে তারা জলের ব্যবসার অনুমতি নিয়েছেন তা-ও জানাতে পারেননি।। তাঁর কথায়, “সবাই যে ভাবে ব্যবসা করছে আমরাও সে ভাবে করি। কোনও লুকোছাপা নেই আমাদের।” তাই যদি হয় তা হলে কেন তিনি স্পষ্ট ভাবে জানাতে পারছেন না? এ প্রশ্নেরও উত্তর মেলেনি।
নিয়মিত বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এই জল-ই খান মিলন কৃষ্ণনগরের বিমল সরকার, অরূপ ঘোষরা। কিন্তু তাঁরাও জানেন না যে, এই জল কি ভাবে, কোথা থেকে আসছে। শুধু ‘জারের জল ভাল’ এই একটা ধারণা থেকে তাঁরা সেই জল খাচ্ছেন। বলেন, “সবাই বলে, ওই জল নাকি জীবাণুমুক্ত। দামটাও দোকানে বিক্রি হওয়া মিনারেল ওয়াটারের থেকে কম। সারা মাসে তেমন খরচ হয় না। তাই কিনে খাই। অল্প বলেও যাতে ব্যাকটেরিয়া ও আর্সেনিক-মুক্ত জল খেতে পারি। তবে কখনও পরীক্ষা করে দেখিনি, জল কতটা পরিশ্রুত। বিশ্বাস করি, এইটুকুই।”
শিমুরালির বাসিন্দা মমতা হালদার বলেন, “সত্যি কথা বলতে, আমরা কী করে বুঝব কোনটা পরিস্রুত পানীয় জল? বিক্রি হচ্ছে, প্রশাসন বিক্রি করতে দিচ্ছে, মানুষ খাচ্ছে, তাই ধরে নিই যে, জলটা ভাল। এখনও পর্যন্ত খেয়ে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তবে সত্যিই জানি না, ওই জলে কী রয়েছে।’’ রানাঘাট শহরের ছোট বাজার এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের রূপম রায় বলেন, “এত মানুষ ওই জল কিনে খাচ্ছেন, প্রশাসনের একটা দায় থাকবে না?”
কিছু দিন আগে ধুবুলিয়া থানা এলাকার এইরকম একটি জল কারখানায় গিয়ে দেখা গিয়েছিল, পাম্প চালিয়ে মাটির তলা থেকে জল তোলা হচ্ছে। সেই জল শুদ্ধ কিনা তা বিচারের কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে তা আদৌ রোগমুক্ত বা আর্সেনিকমুক্ত কিনা সে সংশয় থাকছেই। নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, কল্যাণী, তেহট্ট, নবদ্বীপের অলিগলিতে এই রকম কারখানা চলছে।
নবদ্বীপের এক জলের ডিলার নন্দন সাহা জানান “স্থানীয় জল কোম্পানির কুড়ি লিটারের জার মাত্র দশ টাকায় মেলে। বাড়ি পৌঁছে দিতে হলে এর সঙ্গে অতিরিক্ত পাঁচ থেকে দশ টাকা দিতে হয়। সব মিলিয়ে মেরেকেটে কুড়ি টাকা প্রতি জার।’’ করিমপুরের এমনই এক জল সংস্থার কর্তা শ্যামল বিশ্বাস বলেন, “এক সঙ্গে অনেকগুলো জার নিলে দাম কমিয়ে জারপ্রতি সতেরো-আঠারো টাকায় নামতে পারে। ক্যাটারিংয়ের কাজে একচেটিয়া ওই জলের ব্যবহার হয় এখন।’’ কিন্তু এত কম টাকায় কোন প্রক্রিয়ায় জল জীবাণুমুক্ত বা আর্সেনিকমুক্ত করা যায়, তার জবাব দিতে গিয়ে থমকান তিনি।