কেউ চাইছেন ‘সেই সময়’, কারও দাবি ‘আমি সুভাষ বলছি’। কেউ আবার বিনীত ভাবে বলছেন, ‘‘আমার জন্য ‘রক্তকরবী’।”
হাসিমুখে আবাসিকদের এমন ‘আবদার’ কাগজে লিখে নিচ্ছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। আজ, ৩১ অগস্ট থেকে নিজেদের পছন্দ মতো বই পড়তে পারবেন জেলার কৃষ্ণনগর, কল্যাণী, রানাঘাট ও তেহট্ট সংশোধনাগারের আবাসিকেরা। একই সুযোগ পাবেন জেলার সরকারি হোমের আবাসিকেরাও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় পাঠাগার থেকে বই পড়তে দেওয়া হবে আবাসিকদের। বই নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ির খরচ বহন করবে জেলা প্রশাসন। নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলছেন, ‘‘বই মানুষকে অনেক বদলে দিতে পারে। সংশোধন করে দেয় অনেক ভুল, ত্রুটি। সেই কারণেই এমন উদ্যোগ।”
৩১ অগস্ট রাজ্য জুড়ে পালিত হবে পাঠাগার দিবস। গতে বাঁধা কর্মসূচির বাইরে বেরিয়ে নতুন কিছু করতে চেয়েছিলেন জেলা গ্রন্থাগার দফতরের কর্তারা। প্রথমে ঠিক হয়, কৃষ্ণনগরের সরকারি হোমে বই সরবরাহ করা হবে। কারণ, হোমের আবাসিকরা গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়তে পারেননা। বিষয়টি তাঁরা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পরেই হোমের সঙ্গে যুক্ত করা হয় জেলার সংশোধনাগারগুলোকেও।
সেই মতো হোম ও সংশোধনাগারের আবাসিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাঁরা কী বই পড়বেন। সেই মতো তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। বুধবার থেকে সেই বই তাঁরা পড়তেও পারবেন। সংশোধনাগারগুলিতে আবাসিকদের জন্য গ্রন্থাগার থাকলেও সেখানে তেমন বইপত্র থাকে না। ফলে অনেক সময়েই পছন্দের বই না পাওয়ায় আবাসিকদের মধ্যে বই পড়ার তেমন অভ্যাস তৈরি হয় না। এ বার থেকে আবাসিকদের কাছে নিয়মিত তাঁদের পছন্দের বই পৌঁছে দিয়ে সেই অভ্যাসটা তৈরি করতে পারলেই মানসিক সংশোধনের কাজটা অনেকটাই সহজ হবে বলেই মনে করছেন সংশোধনাগার কতৃপক্ষ। হোমে লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা রকম বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ বার আবাসিকেরা পছন্দ মতো বই পড়তে পারলে সেটা খুবই ভাল হবে বলে মনে করেন হোম কর্তৃপক্ষও।
কৃষ্ণনগর জেলা সংশোধনাগারের সুপার স্বপন ঘোষ বলেন, “পছন্দের বই পড়তে পাবেন শুনে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বহু আবাসিক। আমরাও তাঁদের পছন্দের ভইয়ের তালিকা তুলে দিয়েছে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের হাতে।’’ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় মিত্র বলেন, “আমরা চাইছি সকলের কাছেই বই পৌঁছে দিতে। এ বার থেকে সংশোধনাগার ও হোমের আবাসিকদের হাতে বই তুলে দিতে পেরে আমরাও খুশি।’’