একটু বৃষ্টিতেই দ্রুত বেড়েছে পাট।— নিজস্ব চিত্র।
বুধবার, আষাঢ়স্য প্রথম দিবসের ঢের আগেই এবার মেঘদূত সুখবর বয়ে এনেছে কৃষকদের জন্য। সারাদিন মেঘে ঢাকা কালো গম্ভীর আকাশ থেকে গত কয়েকদিন ধরেই দফায় দফায় ঝরছে স্বস্তির বৃষ্টি। উধাও হয়েছে গায়ে জ্বালা ধরানো, দমবন্ধ করা সেই গরম। প্রাক বর্ষার বৃষ্টিভেজা মৌসুমী বায়ুর ধাক্কায় তাপমাত্রার পারদ পতন ৪১ থেকে একেবারে ৩২ ডিগ্রিতে। ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে হাওয়ায় শেষ রাতে পাতলা চাদরে গা ঢাকছেন অনেকেই।
বেশ কয়েক বছর পরে এমন দীর্ঘমেয়াদি অনাবৃষ্টির মরসুম দেখল রাজ্য।একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে লাগাতার বৃষ্টিহীনতার কারণে জলের অভাবে শুকিয়ে মরতে বসেছিল পাট। রাজ্যের প্রধান অর্থকরী ফসলের হাল দেখে শিউরে উঠেছিলেন পাটচাষি থেকে ব্যবসায়ী সকলেই। খারিফ মরসুম পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে ছিলেন আমন চাষিরা। জলের অভাবে মাঠে মাঠে বৃদ্ধি থমকে গিয়েছিল পটল, ঝিঙে, ঢেঁড়স, কুমড়ো, বেগুন-সহ যাবতীয় সব্জির। আবার একটা বড়সড় ক্ষতির মুখোমুখী হওয়ার জন্য হিসেব কষা প্রায় শুরু করে দিয়েছিলেন চাষিরা।
ঠিক তখনই সে এল। একেবারে সঠিক সময়ে। পয়লা আষাঢ়ের ক’দিন আগেই বৃষ্টির অপ্রত্যাশিত আগমনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ কৃষক সকলেই। বর্ষা নাকি এ বার নদিয়া দিয়েই রাজ্যে প্রবেশ করেছে। এমনটাই অভিমত আবহাওয়াবিদদের। একটানা গরম এবং অনাবৃষ্টির পরে সময়মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টির উপস্থিতিতে নতুন উদ্যমে শুরু হয়ে গিয়েছে চাষআবাদের কাজ।
প্রায় দেড় মাস অনাবৃষ্টির পর অবশেষে গত ১১ জুন বৃষ্টির হাত ধরে নদিয়া দিয়ে বর্ষা ঢুকেছে রাজ্যে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ায় ১১ জুন বিকেলে ২৩ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই নিয়মিত বৃষ্টি হয়ে চলেছে। ১১ জুন ২৩ মিলিমিটার, ১৩ জুন ৩২ মিলিমিটার, ১৪ জুন ৪ মিলিমিটার, ১৫ জুন ১২ মিলিমিটার এবং ১৬ জুন বিকেল পর্যন্ত ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। নদিয়া সংলগ্ন বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী, কালনা-সহ বিভিন্ন এলাকায় একই ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ধমানের কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা অঞ্চলে ১৬ জুন সর্বোচ্চ ৭৫.০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৫ জুন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪৩.০৭ মিলিমিটার। এর আগে নদিয়া জেলায় শেষ বৃষ্টি হয়েছিল ১৭ মে। পরিমাণ ছিল ৮২ মিলিমিটার। তারপর থেকে আর বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল তাপমাত্রা। স্বাভাবিকের থেকে ৪ – ৫ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা বৃষ্টির কল্যাণে কমে মঙ্গলবার দাঁড়িয়েছে ৩২ ডিগ্রি, যা আবার স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৫ ডিগ্রি কম। এই বৃষ্টিতে খুশি চাষিরা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃষ্টিতে সব ধরনের চাষেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বর্ধমানের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ জানান, এই বৃষ্টি সবচেয়ে ভাল হবে আসন্ন খারিফ মরসুম এবং পাটের জন্য। আমনের বীজতলার জন্য সঠিক সময় এখন। কিন্তু অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপ্রবাহের কারণে চাষিরা বীজতলার কাজে হাত দিতে সাহস পাচ্ছিলেন না। বৃষ্টি এসে পড়ায় আমনের বীজতলার কাজ সঠিক সময়ে শুরু করা সম্ভব হবে। না হলে খরিফ মরসুমে বিলম্ব হয়ে যেত। এই বৃষ্টি আমনের বীজতলার শুভসূচনা করল বলে জানান তিনি।
একই সঙ্গে পাটের জন্য এই বৃষ্টি দু’মুখী সুবিধা দেবে বলে মনে করছেন পাটচাষি থেকে কৃষিবিজ্ঞানী সকলেই। একটানা অনাবৃষ্টির কারণে পাটের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জলের অভাবে শুকিয়ে মরতে বসেছিল অধিকাংশ পাট গাছ। ক’দিনের বৃষ্টিতে কার্যত যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেল পাট এবং পাটচাষিরা। কৃষি কর্তারা জানাচ্ছেন এই বৃষ্টির দ্বিতীয় সুবিধা হল চারপাশে শুকিয়ে যাওয়া পুকুর, ডোবা বা নয়ানজুলিগুলি জলে ভরে উঠছে। ফলে কিছুদিন পরেই পাট পচানোর জল নিয়ে সঙ্কটের সম্ভাবনা অনেকটাই দূর হয়ে গেল।