ফসল বিমা আবার কী? অবাক চাষি

গত ৫ থেকে ৩১ জুলাই জেলা জুড়ে প্রধানমন্ত্রী ফসলবিমা যোজনার জন্য আবেদন করার সময়সীমা ছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, সাকুল্যে ৭০ হাজার চাষি আবেদন করেছেন। বহু চাষির অভিযোগ, ফসল বিমার বিষয়ে তাঁরা সে ভাবে কিছুই জানতেন না।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
Share:

ফাইল চিত্র।

ফসলেরও বিমা হয়। আর তার জন্য চাষিকে গাঁটের পয়সাও খরচ করতে হয় না। কিন্তু তার পরেও এই বিমার ব্যাপারে মুর্শিদাবাদের চাষিদের তেমন সাড়া মিলল না। গত ৫ থেকে ৩১ জুলাই জেলা জুড়ে প্রধানমন্ত্রী ফসলবিমা যোজনার জন্য আবেদন করার সময়সীমা ছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, সাকুল্যে ৭০ হাজার চাষি আবেদন করেছেন। বহু চাষির অভিযোগ, ফসল বিমার বিষয়ে তাঁরা সে ভাবে কিছুই জানতেন না।

Advertisement

ডোমকলের ধান চাষি নান্টু মণ্ডল, জলঙ্গির আতাউর রহমান বলছেন, ‘‘ফসল বিমা? সেটা আবার কী? আমরা তো এর কিছুই জানি না।’’ বিষয়টি নিখরচায় জানার পরে তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাঃ, আগে জানতে পারলে নিশ্চয় করতাম। এর পরে আর হবে না, না?’’

যদিও মুর্শিদাবাদের উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তাপস কুমার কুণ্ডু চাষিদের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, “ জেলা জুড়ে কৃষকদের সচেতন করতে ট্যাবলো বেরিয়েছিল। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে কমন সার্ভিস সেন্টার খুলে সচেতন করার পাশাপাশি অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।”

Advertisement

তা হলে চাষিরা এমন নিখরচার যোজনায় আবেদন আবেদন করছেন না কেন? কৃষি দফতরের কর্তাদের দাবি, ফসল বিমার বিষয়ে কৃষকদের সচেতন করা হলেও তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আগামী দিনে আরও বেশি করে বোঝানো হবে।

ফসল বিমা যোজনা কী?

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। যার পোশাকি নাম প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা (রাজ্যে, বাংলা ফসল বিমা যোজনা)। অতীতেও দেখা গিয়েছে, চাষিরা ফসল বিমা যোজনার আওতায় কম এসেছেন। সেই জন্য বেশি সংখ্যক চাষি যাতে ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসেন সে বিষয়ে কৃষি দফতর ও মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন তৎপর হয়েছিল। ৩১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আবেদন করার শেষ দিন ছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে প্রায় ৭০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ হাজার কম। এ বছর এখনও পর্যন্ত ২১ হাজার আবেদন অনলাইনে তোলা হয়েছে। খুব শীঘ্র বাকি আবেদনও অনলাইনে
তোলা হবে।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে বর্ষাকালে আমন ধান চাষ হয়। জেলায় প্রায় ৬ লক্ষেরও বেশি চাষি আমন ধান চাষ করেন। কিন্তু গত বছর মাত্র ৭৫ হাজার কৃষক প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় এসেছিলেন। এ বারেও সেই ছবিটা বিশেষ বদলাল না।

অথচ, শুধুমাত্র আবেদন করলেই চাষিরা ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসেন। কিসান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে যে সব কৃষক ঋণ নেন তাঁরা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনার আওতায় আসেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষতি হলে প্রশাসন ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন। কোনও মৌজার ৩৩ শতাংশের ওপরে ফসলের ক্ষতি হলে সেই এলাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত বলে বিজ্ঞপ্তি দেন জেলাশাসক। বিগত সাত বছরের ফসল উৎপাদনের পরিমাণের থেকে কম হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আর একটি শর্ত পূরণ হবে। এ ভাবে ক্ষতির পরিমাণ এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। সূত্রের খবর, ফসল বিমা যোজনার বিষয়টি সমস্ত চাষিদে কাছে পৌঁছয় না। তা ছাড়াও ফসল বিমায় ক্ষতি নির্ধারণ এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পদ্ধতি জটিল হওয়ার কারণেও বহু চাষি এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখান না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement