নিজস্ব চিত্র।
অলোকনাথ বা এলানিয়া কালীমাতা।
নবদ্বীপের বৈষ্ণবীয় রাসের পর্বান্তর ঘটে নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে। তাঁরই উৎসাহে নবদ্বীপের খ্যাতনামা ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা রাস পূর্ণিমায় মূর্তি গড়ে শক্তিপুজো শুরু করেন। তিনি ঘোষণা করেন, যিনি ঘটের বদলে মাটির মূর্তি গড়ে পুজো করবেন, তিনি রাজানুগ্রহ পাবেন।
তাঁর এই ঘোষণায় প্রথম সাড়া দিলেন ভারতবিখ্যাত নৈয়ায়িক শঙ্করনাথ তর্কবাগীশ। ইনি কৃষ্ণচন্দ্রের সভাপণ্ডিত ছিলেন। নবদ্বীপের দেয়ারাপাড়ায় তিনিই প্রথম আলোকনাথ কালীর মূর্তি নির্মাণ করে পুজো করেন। লোক মুখে এলানিয়া বা অ্যালানে কালী নামে পরিচিত এই প্রতিমাই নবদ্বীপের রাসের প্রথম প্রতিমা, এমনটাই মনে করেন স্থানীয় ইতিহাসের গবেষকেরা। সময়টা ১৭৫২ থেকে ১৭৫৬ সালের মধ্যবর্তী কোনও বছর। এলানিয়া কালী আদতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রবর্তিত ঘোর কৃষ্ণবর্ণা দক্ষিণাকালী। দেবীর আলুলায়িত কুন্তল। এক ঢাল খোলা চুলের এলোকেশী দেবী মূর্তি পরবর্তী সময়ে উচ্চারণ বিভ্রাটে হয়ে যায়— এলানিয়া কালী।
নবদ্বীপের রাসের প্রাচীনতম প্রতিমাটি সূচনায় পারিবারিক দেবতা হিসেবে পূজিত হলেও পরবর্তী সময়ে তা বারোয়ারির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। উদ্যোক্তাদের তরফে কিশোর দত্তের সংযোজন— “আমরা যা শুনে আসছি, তাতে আনুমানিক ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে তান্ত্রিকাচার্য ভৃগুরাম গঙ্গার তীরে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে কালীসাধনা শুরু করেন। তখন কিন্তু মূর্তি ছিল না। পরবর্তী কালে রাজপণ্ডিত শঙ্করনাথ তর্কবাগীশ রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অনুপ্রেরণায় ১৭৫৩-৫৬ সালের মধ্যবর্তী কোনও সময়ে মূর্তি গড়ে রাস পূর্ণিমায় শক্তিপুজো শুরু করলেন। ভৃগুরাম সেই পুজোয় পৌরহিত্য করেন। সেই কালীই হল অলোকনাথ বা এলানিয়া কালী।’’
পরবর্তী কালে অবশ্য শঙ্করনাথের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় ভৃগুরাম এই পুজোর পৌরহিত্য করা বন্ধ করে দেন। এবং বড়শ্যামা প্রতিষ্ঠা করেন। নবদ্বীপের রাসে মূর্তি পুজোর সূচনা শঙ্করনাথের হাত ধরেই, জানাচ্ছেন তিনি।
কিশোর আরও বলেন, ‘‘এলানিয়া কালী নবদ্বীপের রাসে একমাত্র প্রতিমা, যেটি পঞ্চমুণ্ডির আসনের উপরে পূজিত হয়। তাই আমাদের মূল পূজাবেদি এখনও মাটির। ওই স্থান বাঁধানো যাবে না। একই সঙ্গে তিনি অলোকনাথ শিবেরও প্রতিষ্ঠা করেন।”
উদ্যোক্তাদের আক্ষেপ, নবদ্বীপের রাসে প্রথম প্রতিমা হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের পুজো প্রচারের আলোয় সে ভাবে আসেনি। আর্থিক ভাবে খুব স্বচ্ছল নয় ওই বারোয়ারি। এ বারের বাজেট সওয়া দুই লক্ষ টাকা। যাবতীয় খরচ বহন করেন সদস্যেরাই। নিজস্ব চিত্র