প্রতীকী ছবি।
ফরাক্কার পরে এ বার দু’লক্ষ টাকার জাল নোট-সহ এক জনকে গ্রেফতার করল সুতি থানার পুলিশ। সোমবার রাতে সুতির সাজুর মোড় থেকে ধৃত ওই যুবকের নাম আলমগীর হোসেন (২০)। বাড়ি অরঙ্গাবাদেরই ইমামবাজারে। এক সময় গরু পাচারে বার বার নাম জড়িয়েছে ইমামবাজারের বেশ কয়েক জনের। পুলিশের দাবি, কড়া নজরদারির কারণে আপাতত সুতি দিয়ে গরু পাচার বন্ধ। গরু পাচারে রাশ টানায় দুষ্কৃতীরা এখন জাল টাকার কারবারে হাত পাকাচ্ছে তারা।
এ দিকে মঙ্গলবারে ধৃত কালিয়াচকের দুই বাসিন্দা জাকির শেখ ও বাপী ঘোষের বিরুদ্ধে কলকাতার বিশেষ আদালতে চার্জশিট দাখিল করল এনআইএ। গত ১১ এপ্রিল বল্লালপুর বেলি ব্রিজের কাছ থেকে সাত লক্ষ টাকার জাল নোট-সহ তারা ধরা পড়ে ফরাক্কা থানার পুলিশের হাতে। ৯ মে ওই মামলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে এনআইএকে হস্তান্তর করে ফরাক্কা থানার পুলিশ। সেই মামলার প্রথম পর্যায়ের তদন্ত শেষে মঙ্গলবার দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ১২০বি, ৪৮৯বি ও ৪৮৯সি ধারায় চার্জশিট পেশ করা হয়। এনআইএ জানিয়েছে, ওই জাল নোট দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছিল তারা। প্রথম চার্জশিট দেওয়া হলেও ১৭৩ (৮) সিআরপিসি ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলবে।
এ দিকে সুতির সাজুর মোড়ে ধৃত যুবকের নাম নিয়ে কিছুটা ধন্দে পড়ে পুলিশ। সে তার নামের শেষে কখনও মহালদার, কখনও শেখ বলে উল্লেখ করায় পুলিশ ধৃত যুবকের সব নামই জুড়ে দিয়েছে এফআইআরে যাতে আইনের ফাঁক গলে কোনও ভাবে সে বেরিয়ে না যেতে পারে।
পুলিশ জানায়, আলমগীরের হাতে কালো প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা ছিল ২০০০ টাকার ১০০টি জাল নোট। সে ওই নোট কাউকে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় সে। এই ঘটনায় পুলিশ জগতাই গ্রামের আর এক জনের নাম পেয়েছে। তার খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
পুলিশের সন্দেহ, তবে কি গরু পাচারে লাগাম পড়ায় এ বার জাল টাকা পাচারে হাত পাকাচ্ছে পাচারকারীরা? এক সময় সুতির পথ দিয়ে গরু পাচারের ঘাঁটি ছিল ইমামবাজারের কয়েকটি এলাকা। গত কয়েক মাসে পুলিশ ও বিএসএফের হাতে পাচারের বহু গরু ধরা পড়েছে। বেশ কয়েক জনের গুলিবিদ্ধ দেহ মিলেছে গঙ্গার চরে। সুতির চাঁদনিচক বিএসএফ আউটপোস্ট থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে একেবারে সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় এক পাচারকারীও। ধৃত পাচারকারীদের অনেকেই এখনও জেলে রয়েছে। পুলিশের দাবি, গরু পাচারের কাঁচা টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুষ্কৃতীরা এখন সুতিতে রোজগারের বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছে জাল টাকা ও আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারকে। কারণ এই কারবারে ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকলেও প্রাণের ঝুঁকি খুবই কম।
এমনিতেই রাজ্যে জাল নোটের কারবারে শীর্ষে মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর। করিডোর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মুর্শিদাবাদকে। আর মুর্শিদাবাদে এই কারবারের শীর্ষে ধুলিয়ান তথা শমশেরগঞ্জ। তার পরেই রয়েছে ফরাক্কা ও সুতি। আসলে এই তিন থানাকে ঘিরে রেখেছে একদিকে ঝাড়খণ্ড, অন্য দিকে বাংলাদেশ। কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগর থেকে সহজেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে আসা যায় এই তিন থানা এলাকায়। আর তারই সুযোগ নিচ্ছে পাচারকারীরা।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “ পুলিশের কড়া পদক্ষেপের কারণেই সুতি দিয়ে গরু পাচার বন্ধ করা গিয়েছে। জাল টাকা সুতিতে আগেও ধরা পড়েছে। তবে তাদের বেশিরভাগই মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকার বাসিন্দা। সোমবার যে ধরা পড়েছে সে সুতির ইমামবাজারের। এর সঙ্গে যুক্ত আরও এক জনও সেই এলাকারই। তার খোঁজেও তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।”