ফুল যাবে বাজারে। ফাইল চিত্র
মেয়ের বিয়ের ফুলের বায়না দিতে গিয়েছিলেন বিমলেন্দু মজুমদার। দোকানির দেখানো ছবির অ্যালবাম থেকে তাঁর পছন্দের বিয়ের আসর, বরাসন সাজানোর সঙ্গে বরকনের গোলাপের মালার ‘প্যাকেজ’ বাইশ হাজার টাকা পড়বে শুনে কেমন যেন থ মেরে গিয়ে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই ব্যাঙ্ককর্মী। ফুলের ঘায়ে কার্যত তাঁর মূর্ছা যাওয়ার দশা!
সেটা ছিল অঘ্রান মাস। পুজোর পরে বিয়ের প্রথম মরসুমে ফুল তখন অগ্নিমূল্য। এক-একটা গোলাপ আট থেকে দশ টাকা! একশো রজনীগন্ধার চেন হাজার টাকা! চার-পাঁচশোর নীচে রজনীগন্ধার গোড়ের মালা নেই। গোলাপের মালা শুরুই দেড় হাজার টাকা থেকে! নিরুপায় কন্যাকর্তারা বরের গাড়ি বা বাড়ি সাজানোর জন্য বাধ্য হয়ে প্লাস্টিক বা কাগজের ফুলের দিকে ঝুঁকেছিলেন। কেউ-কেউ বরের গাড়ি সাজিয়েছিলেন লজেন্স দিয়ে!
তবে অঘ্রান-মাঘ পেরিয়ে মধুমাস ফাল্গুনে বরকর্তা থেকে কন্যাকর্তা দু’ পক্ষকেই স্বস্তি দিয়েছে ফুলের পড়তি দাম। বাজার এখন অনেকটাই ঠাণ্ডা। রানাঘাট, নবদ্বীপ, বহরমপুর সর্বত্রই ফুলের দাম প্রায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। নবদ্বীপের পাইকারি ফুলের বাজারে রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা প্রতি কেজি। একশো রজনীর চেন সাড়ে পাঁচশো থেকে ছ’শো টাকা। খোঁপায় দেওয়ার এক-একটি গোলাপ ৪-৫ টাকা। বিয়ের জোড়া মালা ২০০ টাকা থেকে শুরু। কনের ফুলের সাজ ১৬০-৫০০ টাকার মধ্যে। নবদ্বীপের পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী কুশ দেবনাথ বলেন, “এর থেকেও মাঝে দাম কমেছিল। এখন একটু চড়েছে। তবে অঘ্রান মাসের তুলনায় বাজার সস্তা।”
একই কথা বলছেন বহরমপুরের ফুল ব্যবসায়ী চিকু কর্মকার, টোটোন দাসেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত মঙ্গলবার ছিল এ মরসুমের শেষ বিয়ের দিন। এর পরের মরসুম আবার বৈশাখে শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার বহরমপুরে এক জোড়া গোলাপের মালা বিক্রি হয়েছে ১৫০০ টাকায়। রজনীগন্ধার মালা ৩০০-১০০০ টাকার মধ্যে। জারবেরা মালা প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়। খোঁপায় জড়ানোর নতুন ফ্যাশনের ‘করণ’ ফুলের মালার দাম এক-একটা ৪০ টাকা। উপহারের তোড়া ১৫০-৫০০ টাকার মধ্যে। চিকু কর্মকার বলেন, “এখন বিয়েবাড়ি সাজানোর প্যাকেজ কুড়ি হাজারের মধ্যেই হয়ে যাচ্ছে। যেটা অঘ্রান মাসে ভাবাই যায়নি।” কেন ফুলের দাম অতটা চড়েছিল অঘ্রান মাসে? জবাবে বৃষ্টিকে দায়ী করেছেন নদিয়ার রানাঘাটের ফুলচাষিরা। এক ফুলচাষি চঞ্চল সাহা বলেন, “দুর্গাপুজোর পর অসময়ের বৃষ্টি ফুল চাষে ক্ষতি করেছিল। ফুলের দামও চড়ে গিয়েছিল। রজনী এবং গোলাপের সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছিল।”
তবে নোকারি, ধানতলা কিংবা কালীনারায়নপুর, আড়ংঘাটার ফুলের হাটে বিকিকিনি করতে আসা ফুল চাষিদের অবশ্য তাতে শাপে বর হয়েছিল। গোটা মরসুম জুড়ে ভাল দামে বিকিয়েছে অবশিষ্ট ফুল। স্থানীয় ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জ্যোতির্ময় মল্লিক জানান, “সবাই যে ঠিক দাম পেয়েছেন এমন নয়। যাঁদের ফুল বৃষ্টির পরেও ছিল কেবল তাঁরাই লাভবান হন। এখন তো বাজার খুবই নিম্নমুখী। সত্তর থেকে একশো টাকা কেজি দরে হাটে বিকোচ্ছে রজনী।”