ফাইল চিত্র।
দশ মাস পার। ফের দোরগোড়ায় বর্ষা। কিন্তু গত বছর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৫৭০ পরিবারের একজনেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়নি শমসেরগঞ্জে। ২.৭৮ একরের জমির খোঁজ মিললেও সেখানে কবে গঙ্গায় গৃহহারাদের পুনর্বাসন হবে তা এখনও অনিশ্চিত। তাই ভাঙনে গৃহহারারা দীর্ঘদিন ধরে কেউ রয়েছেন তাঁবুতে, কেউবা কারও বাড়ির বারান্দায়। তাঁরাও জানেন না পুনর্বাসনের জন্য জমির পাট্টা কবে হাতে আসবে তাঁদের।
গত বছর অগস্ট মাসে শমসেরগঞ্জে গঙ্গা পাড়ের ধুসরিপাড়া, হীরানন্দপুর,ধানঘরা ও শিবপুর ৪টি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েন। সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় ৫৭০। সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তাদের পুনর্বাসনের। কিন্তু এ পর্যন্ত ত্রিপলের তলাতেই রাতবাস করছেন ভাঙনে গৃহহারা সেইসব পরিবার। জমি কিনে ঘর করবেন সে সামর্থ্য কারও নেই।
শিবপুরের রীতা মণ্ডল তাদের একজন। বলছেন, “অন্যের জমিতে ত্রিপল খাটিয়ে রয়েছি। তাও তিন জনের বেশি থাকা যায় না। ঘুমোতে যায় দুজন পাশেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে।”
ঘর গিয়েছে ভাঙনে। সপরিবারে ঠাঁই নিয়েছেন পাশেই এক জমিতে ত্রিপলের নীচে। ভাঙন জীবনটাই বদলে দিয়েছে গীতা সরকারের। পাকা বাড়ির দালান থেকে নেমে এসেছেন একেবারে প্রায় খোলা আকাশের নীচে।
একইভাবে নদী গিলে খেয়েছে প্রেয়সী মণ্ডলের পাকা দালানও। দুই ছেলে মেয়ে, স্বামী, স্ত্রী মিলে আশ্রয় নিয়েছেন এ
ক আত্মীয়ের বাড়ির বারান্দায়। সেখানেই রান্না, শোওয়া। দুজনেরই স্বামী পেশায় দিনমজুর। একই ভাবে তাঁবুর নীচে দিন কাটছে সনত মণ্ডল,এসরাজ শেখদের। এসরাজ শেখ বলছেন, “সেই কবে থেকে শুনছি আমাদের পুনর্বাসনের কথা। কিন্তু কবে? বর্ষাতো ফের ফিরে এল। বৃষ্টিতে কীভাবে দিন কাটে আমরাই জানি।”
ভাঙনে গৃহহারাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে শমসেরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন বিদায়ী বিধায়ক তৃণমুলের আমিরুল ইসলাম।তিনি বলেন, “ওই জায়গায় প্লটিং করার কাজ শুরু হয়েছিল। সেখানে পুনর্বাসনের বোর্ডও টাঙানো হয়েছে। যত জনকে সেই জমিতে পুনর্বাসন দেওয়া সম্ভব তাদের সেখানে বসানো হবে। কাজ শুরু হতেই নির্বাচন ঘোষণা হয়। সেই নির্বাচন শমসেরগঞ্জে এখনও শেষ হয় নি। তার মধ্যেই লকডাউন। প্রায় সব অফিসই বন্ধ। এই জন্য পুনর্বাসনের কাজ শেষ করা যায়নি।”
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ .৭৮ একর জমির খোঁজ মিলেছে। সেখানে ১৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। এতগুলি পরিবারের জন্য প্রাথমিক স্কুল, আইসিডিএস সেন্টার, উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তেও জমি থাকবে সেখানে। সব মিলিয়ে একটি নতুন বসতি গড়ে উঠবে সেখানে।
চার গ্রামের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫৭০। সকলকে পুনর্বাসনের জন্য প্রায় ৮ থেকে ১০ একর জমি লাগবে।
শমসেরগঞ্জের এই এলাকা এত ঘনবসতিপূর্ণ যে এক লপ্তে অত জমি পাওয়া অসম্ভব। এই এলাকায় খাস জমি খুব কম। আপাতত যে ২.৭৮ একর জমি মিলেছে তাতে যে ১৯৭ পরিবারের বাড়ি গঙ্গায় ধসে গেছে এবং বিকল্প কোনও সংস্থান নেই তাদেরই সেখানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। বাকি ক্ষতিগ্রস্তদের যেমন যেমন জমি মিলবে সেইভাবেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। গৃহহারাদের সকলকে সরকারি প্রকল্পে ঘর করে দেওয়ারও চেষ্টা হবে। শমসেরগঞ্জের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা বলেন, “জমি চূড়ান্ত হয়েছে। জমি বণ্টন কমিটির বৈঠকে সে সিদ্ধান্ত অনুমোদনও পেয়েছে। যারা পুনর্বাসন পাবেন তাদের প্রত্যেকের নামে সরকারি পাট্টা দেওয়া হবে। তা আটকে রয়েছে নির্বাচন ও করোনা পরিস্থিতির জন্য। সেটা মিটলেই ভাঙনে গৃহহীনদের পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এছাড়া আইনগত কোনও বাধা নেই পুনর্বাসনে।”রীতা মণ্ডল বলছেন, “কিন্তু আবার যে বর্ষা চলে এল। ভাঙন আবার কতজনের ঘর গিলে খাবে কে জানে? সবাই গতবারের সেই আতঙ্কেই রয়েছে। ”