২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গাংনাপুরে এখানেই বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। নিজস্ব চিত্র
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় গত মঙ্গলবার বাজির কারখানায় বিস্ফোরণ ও মৃত্যুর পর থেকেই মন ভাল নেই নদিয়ার গাংনাপুরের। সেখানকার অধিকাংশ মানুষের মনে ফিরে-ফিরে আসছে পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া প্রায় একই রকম ঘটনার স্মৃতি।
গাংনাপুরের বড়বাজার থেকে পাকা রাস্তা থানার সামনে দিয়ে রানাঘাটের দিকে চলে গিয়েছে। সেই রাস্তার দু’ধারে এখনও রয়েছে কিছু বাজির দোকান। প্রচুর আতসবাজি সাজানো থাকলেও ক্রেতার ভিড় তেমন লক্ষ্য করা গেল না। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এখানেও একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। কারখানায় ভিতরে বসেছিলেন মালিক মিঠু মণ্ডল। পাশে তুবড়িতে মশলা ভরছিলেন কর্মী রঞ্জিত বিশ্বাস। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। বছর পাঁচেক আগের সেই দিনটার কথা মনে করলে আজও অনেকে আঁতকে ওঠেন। ভুলতে চান সেই দিনটিকে। কিন্তু এগরার ঘটনায় তা আপনা থেকেই টাটকা হয়ে উঠেছে।
এগরা এক নম্বর ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার খাদিকুল গ্রামে বেআইনি ভাবে বাজি কারখানা চলছিল বলে অভিযোগ। বিস্ফোরণের ফলে গোটা এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর আগেও পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল।
এই বিস্ফোরণ নিয়েই কথা হচ্ছিল গাংনাপুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের এক মহিলার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘‘ছেলে,মেয়েকে নিয়ে ঘরে ছিলাম। স্বামী কাজ থেকে বাড়ি ফিরে স্নান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই সময় প্রচণ্ড শব্দ, আগুনের ঝলকানি, ধোঁয়া। পাকা রাস্তার ধারে দোতালা বাড়ি রয়েছে সে দিনের বিস্ফোরণে মৃত মিঠু মণ্ডলের। নিচের তলায় এখনও বাজির দোকান চালান তাঁর ছেলে প্রসেঞ্জিৎ মণ্ডল। দোকানে বলেই বলেন, ‘‘মা চলে যাওয়ার পর আমার আর আমার ব্যবসায় মন নেই। বিকল্প কিছু নেই বলে এটা করতে হচ্ছে। তবে কোনও বাজি আর তৈরি করি না। মূলত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার চাম্পাহাটি থেকে সামান্য কিছু আতসবাজি কিনে নিয়ে এসে দোকানে বিক্রি করি। তা-ও, সেই ব্যবসা এখন আর নেই।’’ চার দশকের বেশি সময় ধরে রানাঘাট ২ নম্বর ব্লকের দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের গাংনাপুর এলাকায় তিনটি বাজির কারখানা চলছে। দুর্ঘটনার পর দোকানগুলিতে অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার এগরার বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ এবং মৃত্যুর পর ওই দিন বিকালে পুলিশের আধিকারিকেরা গাংনাপুরের বাজি কারখানা এবং দোকানগুলি পরিদর্শন করেছেন। লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা, নিয়ম মেনে ব্যবসা করছে কিনা— সে সব দেখা হয়েছে।
দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা দেবগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি সুবীর ধর বলেন, ‘‘এখানে বিস্ফোরণের পর কারখানায় কড়া নজর রাখা হয়। কাউকে শব্দ বাজি তৈরি করতে দেওয়া হয় না। কিছু আতসবাজি তৈরি হত। যত দূর জানি, এখন সেটাও বন্ধ।