বিরহীতে পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নদিয়ার হরিণঘাটায়। ছবি: অমিত মণ্ডল
রবিবার ইনসাফ যাত্রায় ৪৫তম দিনে ডিওয়াইএফ রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁকে লক্ষ্য করে ‘কু-কথা’র অভিযোগ তুললেন।
রবিবার দুপুর দুটো নাগাদ শিমুরালি থেকে হরিণঘাটার বিরহীতে প্রবেশ করে ইনসাফ যাত্রা। বিরহী বাজার এলাকায় পথসভা হয়। অভিযোগ, সেখান থেকে ২.১৫ নাগাদ জাতীয় সড়ক পার করে মদনপুরের দিকে ইনসাফ যাত্রা আসার সময়ে মীনাক্ষীকে লক্ষ্য করে ট্রাফিক পুলিশের এক আধিকারিক গালিগালাজ করেন। ওই আধিকারিকের নাম জানতে চাওয়া হলে পুলিশ তা এড়িয়ে যায় বলেও অভিযোগ। এর পরেই ইনসাফ যাত্রার পদযাত্রীরা এ দিন জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ উঠে যায়। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ডিএসপি ট্রাফিক রানাঘাট গালিগালাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, এখানে কে ক্ষমতায় আসবে, কে আসবে না, তা তিনি ঠিক করে দেবেন।’’
এর পরে মীনাক্ষীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পুলিশের পোশাক ও স্টার এখন ভাড়া পাওয়া যায়— ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে ট্রাক থেকে পয়সা খাওয়ার জন্য। এই পুলিশের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে।’’
যদিও রানাঘাট পুলিশ জেলার ডিএসপি ট্রাফিক দীপক অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে। জাতীয় সড়কে বাস দাঁড় করিয়ে দলীয় কর্মীদের নামানো হচ্ছিল। সেই কারণে সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়। আমি কেবল মাত্র বাস সরিয়ে পাশের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যেতে বলি। তা ছাড়া, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার সামনাসামনি দেখাও হয়নি। যা কথা হয়েছে, বাস চালকের সঙ্গেই হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে আলুর দাম না পাওয়া ও সারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে হুগলির গোঘাটে রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন চাষিরা। সেই সময়েও ওই অবরোধ তুলতে এসে পুলিশ চাষিদের ‘কু-কথা’ বলেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ দিন সিপিএমের ইনসাফ যাত্রাতেও ফের পুলিশের বিরুদ্ধে 'কু-কথা' বলার অভিযোগ উঠল।
ডিওয়াইএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত আটটা নাগাদ রানাঘাট শহরে ঢোকে ইনসাফ যাত্রা। রাতেই পুরসভার সামনে একটি সভা হয়। যাত্রায় অংশ নেওয়া প্রায় ১৭০ জন কর্মী রাতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দলীয় কর্মীদের বাড়িতেই রাত্রিযাপন করেন। রবিবার সকালে ডি এল রায় ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয় যাত্রা। শহরের সেন্ট্রাল গেট, মিশন রোড, কোর্ট মোড় জগপুর রোড হয়ে পায়রাডাঙা পৌঁছয় মিছিল। সেখান থেকে দুপুরে চাকদহের তাতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে এসে পৌঁছয় যাত্রা। মোটর সাইকেল র্যালি করে দলের কর্মীরা প্রগতি সঙ্ঘের মাঠে পৌঁছয়। সেখানে বক্তৃতায় মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের ইনসাফ যাত্রা যতই ব্রিগেডের দিকে যাচ্ছে, ততই ওদের ধকপকানি বেড়ে যাচ্ছে। সিংহেরবাগান এলাকায় আমাদের ঝান্ডা, ফেস্টুন ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে আমাদের আটকানো যাবে না।’’
ওর জবাবে চাকদহ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপকুমার সরকার বলেন, ‘‘আমরা ওদের মোটেও ভয় পাচ্ছি না। আমাদের এমন দুর্দিন আসেনি যে ওদের ঝান্ডা, ফেস্টুন খুলে দিতে হবে!’’ আর বিজেপির চাকদহ বিধানসভার আহ্বায়ক সুকুমার করণজাই বলেন, ‘‘ওদের ভয় পাওয়ার কোনও প্রশ্নই আসে না।’’
দিনের শেষে গয়েশপুর পুরসভা এলাকায় পদযাত্রা ও পথসভা করে ইনসাফ যাত্রা রাতে কল্যাণী আইটিআই মোড়ের মাঠের একটি অংশে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে বুদ্ধপার্ক হয়ে নদিয়া জেলা থেকে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় চলে যায় ওই পদযাত্রা।