চলছে বিসর্জন। নিজস্ব চিত্র
দু’টো নৌকা পাশাপাশি চলে এলেই চিৎকার করে সাবধান করে দিচ্ছিলেন বাপ্পা শেখ, সাবীর শেখরা। গোটা নদী জুড়ে যেন তাঁদের সতর্ক চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোথাও কোনও নৌকার একটু বেচাল দেখলেই তাঁরা অস্থির হয়ে পড়ছেন।
এদিকে, নৌকা নিয়ে ঘুরে ঘুরে গোটা বিসর্জন তদারকি করছেন বজলুর রহমান, হাজিবর দফাদারেরা। কারণ, তাঁরা চান না বিসর্জন ঘিরে কোনও রকম দুর্ঘটনার মুখে পড়েন এলাকার মানুষ। দুর্গাপুজো এখানে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে বাঁধা পড়ে নেই। দুর্গাপুজো এখানে প্রকৃত অর্থেই সর্বজনীন। তাই অর্থাভাবে বন্ধ হতে বসা দুর্গাপুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁরাই বাড়ি বাড়ি বিল বই নিয়ে চাঁদা তুলেছেন। হিন্দু প্রতিবেশীদের হাতে তুলে দিয়েছেন নতুন পোশাক। আবার, বিজয়ার দিন সেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনই এগিয়ে এসেছেন বিসর্জনের তদারকিতে।
নদিয়ার অন্যতম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া। প্রত্যন্ত এই গ্রামে এখনও প্রায় আটটি দুর্গাপুজো হয়। দশমীর দিন গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা জলঙ্গী নদীর বুকে বিসর্জন প্রায় উৎসবের আকার নেয়। বারোয়ারিগুলি নৌকায় প্রতিমা তোলে। সেই সঙ্গে শ’খানেক নৌকায় মানুষ ঘুরে বেড়ায় জলঙ্গীর বুকে। দুপুরের পর থেকে নৌকা নামতে শুরু করে নদীবক্ষে।
সন্ধে নামলে ডাঙায় ভিড়তে শুরু করে সেই সব যাত্রী-বোঝাই নৌকা। তাতে যেমন থাকেন হিন্দুরা, তেমনই থাকেন মুসলিমেরা। সকল যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেচে নিজেদের কাঁধে তুলে নেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওই মানুষগুলি। বড় আন্দুলিয়ার দিকের পাড়ে মেলা বসে। সেই মেলায় রাত পর্যন্ত উপচে পড়ে ভিড়। সেই ভিড়ে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় রেশমিনা খাতুন-সোনালি বিশ্বাসেরা। কেনে ন রংবেরঙের কাচের চুরি। ওপারের পাটোয়াভাঙার তীরে ভিড় করে থাকে সোলেমান, ইসমাইলেরা। ভাসান শেষ হলে তাঁরাও ঘাট পেরিয়ে চলে আসেন মেলায়।
বড় আন্দুলিয়ার বাসিন্দা সমীর রুদ্র বলছেন, “সমস্ত দেশ জুড়ে মানুষে মানুষে যে বিভাজনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, বড় আন্দুলিয়ায় আমরা তার এতটুকু ছোঁয়াচ লাগতে দিইনি।”