দুর্গাপুজো কখনই পুজোয় মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এ হল দুর্গোৎসব। আর যে কোনও উৎসব কোনও বিশেষ ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। তা সকলের হয়ে ওঠে। সেটা হয়েছে বলেই বলেই দুর্গাপুজো সর্বজনীন। এই উৎসবে জাতিধর্মের দেওয়াল মুছে যায়। বাঙালি হিসেবে আমিও সেই উৎসবর শরিক হই। আমি যে পরিবেশে বড়় হয়েছি সেখানে দোল, দুর্গাপুজো আর রাসই প্রধান উৎসব। বৃহত্তর অর্থে যেখানে আমার জীবনের শিকড়় বহুদূর বিস্তৃত সেই পরিবেশের উৎসব, পার্বণে মিশে আছে আমার অন্তরের আবেদনে। শারদোৎসব আমাকে ভীষণ উজ্জীবিত করে। ইদ আর পুজোর মিলেই আমার সাংস্কৃতিক সত্ত্বা। তবে এ বার রোগের দাপটে উৎসবে ছন্দপতন ঘটেছে। মন ভাল নেই তাই। করোনা জীবনের স্বাভাবিক গতিকে ধাক্কা দিয়েছে। সেই প্রভাব এসে পড়েছে পুজোর আনন্দে।
পুজোর পাঁচদিন আনন্দে ভাসতাম, জানি না তেমন আর এ বছর পারব কিনা। করোনাকালে আমাদের অর্থনীতি প্রায় পঙ্গু। মানুষ কাজহারা। কেনাকাটা দূরে থাক, জীবন বাঁচানো এবং দৈনিক গ্রাসাচ্ছাদন অনেকের পক্ষে দুষ্কর হয়েছে। এত মানুষের এত কষ্টের মধ্যে কী আর উৎসব ভাল লাগে!
তা ছাড়া, উৎসব হল পরস্পর একত্রিত হওয়া। মেলামেশা। তাতেও তো এ বার বিধিনিষেধ। তবে দুর্গাপুজোতে সব কলুষতাই দূর হয়ে যায়। করোনা যে বাধার বিন্ধ্যাচল রচনা করেছে তাও আশা করছি পুজোয় দূর হবে। আমি মূলত ইদ আর পুজোয় কেনাকাটা করি। এ বার দু’টো উৎসবই করোনার কারণে আনন্দহীন। উৎসব ফিকে বলে কেনাকাটাতেও অনীহা। নিয়মরক্ষার জন্য ছেলেমেয়েদের কিছু জামাকাপড় কিনে দিয়েছি বটে, তবে তা পড়়ে মণ্ডপে কতটা আনন্দ করা যাবে জানি না।
শিক্ষক
অনুলিখন: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়