নিত্য যানজটের গুঁতো, হাঁসফাস কৃষ্ণনগরের

ঘটনা-১। সকাল সাড়ে ৯টা। কৃষ্ণনগরের ক্ষৌণিশ পার্ক টোটো থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছিলেন কৌশিক দাস। কাঁধের ব্যাগটা বাঁ হাত দিয়ে শক্ত করে ধরা। মোবাইলে কাউকে বলছেন, ‘‘ট্রেনটা চলে যাইনি তো রে। যা জ্যাম, এখান থেকে বেরোতে পারব কি না কে জানে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

যানজটে স্তব্ধ কৃষ্ণনগরের নেদেরপাড়া মোড়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

ঘটনা-১। সকাল সাড়ে ৯টা। কৃষ্ণনগরের ক্ষৌণিশ পার্ক টোটো থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছিলেন কৌশিক দাস। কাঁধের ব্যাগটা বাঁ হাত দিয়ে শক্ত করে ধরা। মোবাইলে কাউকে বলছেন, ‘‘ট্রেনটা চলে যাইনি তো রে। যা জ্যাম, এখান থেকে বেরোতে পারব কি না কে জানে।’’

Advertisement

ঘটনা-২। দুপুর সাড়ে বারোটা। শহরের নেদেরপাড়া চৌমাথা মোড়ে যানজটে গাড়িঘোড়া থমকে। পোস্টঅফিসে মোড়ে এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন শক্তিনগরের রাজু সাহা। তিনি বলেন, ‘‘বেলডাঙা মোড় থেকে যানজট। সামান্য রাস্তা পার হতে ১৫ মিনিট সময় লেগে গেল। আর বলবেন না প্রতিদিন এই রাস্তায় যানজটে নাজেহাল হতে হচ্ছে।’’

কৌশিক বা রাজুদের মতো প্রতিদিন যানজটের মুখে পড়তে হচ্ছে হাজার হাজার শহরহাসীকে। শহরের বেলডাঙা মোড় থেকে শুরু করে নেদেরপাড়া পর্যন্ত রাস্তায় সারাক্ষণই যানজট। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে যানজট আরও বাড়ে। নেদেরপাড়া মোড় থেকে এভি স্কুল মোড়, সদর হাসপাতাল মোড় থেকে পোস্টঅফিস মোড় পর্যন্ত দিনভর যানজট লেগে থাকে। অফিস ও স্কুলের সময়ে যানজট ভয়াবহ রূপ দেয়। বাসিন্দাদের প্রাণ হাতে নিয়ে যাতয়াত করতে হয়।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, এমনিতে রাস্তা সরু তাঁর ওপরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় দখল করে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। কোথাও বা রাস্তা হকার দখলে গিয়েছে। তাঁর ওপরে দূরপাল্লার গাড়িও শহরের ভেতর দিয়ে যাতয়াত করে। ফলে যানজট নিত্যসঙ্গী। শহরের বাস, ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি পণ্যবাহী গাড়ি যাতয়াত করে। তার ওপরে শহর ও শহর লাগোয়া এলাকায় এক হাজারের ওপরে টোটো গাড়ি চলাচল করে। ফলে যানজটে নাকাল হন শহরবাসী।

শহরের যানজট কমাতে কি উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন?

উত্তরে কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা জানান, পোস্টঅফিস মোড়ে রাস্তা দখলমুক্ত করা হয়েছে। শহরের অন্যান্য এলাকাতেও দখলমুক্ত অভিযান করা হবে। যেখানে সেখানে যাতে গাড়ি না দাড়ায় তা দেখার জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া ও শহরের গোদাডাঙা থেকে একটি বাইপাস রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই রাস্তা কালীনগর, শক্তিনগর হয়ে বাদকুল্লা, রানাঘাট কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়কে গিয়ে উঠবে। ফলে দূরপাল্লার গাড়িগুলিকে শহরের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়ে বের করে দেওয়া যাবে। নদিয়া জেলা পরিষদও কৃষ্ণনগরে যানবাহনের চাপ কমাতে সেতু তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে।

নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় জানান, প্রতিদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। তার ওপরে সব ধরনের গাড়ি শহরের ভেতর দিয়ে যাতয়াত করাই প্রায় যানজট লেগে রয়েছে। গাড়ির চাপ কমাতে তাই কৃষ্ণনগর শহর লাগোয়া হরনগরে জলঙ্গি নদীর ওপর সেতু তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণনগরের ভাণ্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েত পাশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা চলে গিয়েছে হরনগর ফেরিঘাটে। হরনগর ফেরিঘাট পার হলেই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে বাহাদূরপুরে ৩৪ জাতীয় সড়কে যাওয়া যাবে। এই সেতু তৈরি করে চাপড়া, তেহট্ট করিমপুর-সহ ওই এলাকার ওপর দিয়ে
আসা যেসব গাড়ির শহরে ঢোকার প্রয়োজন নেই সেগুলিকে এই রাস্তা দিয়ে ৩৪ সড়কে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই সেতুর জন্য মাটি পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরির কাজও চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement