বিরিয়ানিতে মজা বাঙালির বিয়ে বাড়ির মেনুতেও বিরিয়ানি রাখা হচ্ছে। ফাইল চিত্র।
কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। স্বাদ বদল করতে এখন অনেকেই ‘মাছ ভাত’ ছেড়ে বিরিয়ানির দিকে ঝুঁকছেন। শহর থেকে শুরু করে আধা শহর, গঞ্জ প্রায় সর্বত্রই বিরিয়ানির দোকান ক্রমে বাড়ছে। যার জেরে খাদ্য রসিক বাঙালির পাতে মাঝে মধ্যে দেখা মিলছে বিরিয়ানিরও। আর এই বিরিয়ানি প্রীতির কথা মাথায় রেখে মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন বিয়ে বাড়ির মেনুতেও জ্বল জ্বল করছে বিরিয়ানি, বুরানি, রায়তা, চিকেন চাপ, মটন চাপ। ক্যাটারার সংস্থার লোকজনেরা বলছেন, আগে প্লেন ভাতের সঙ্গে ফ্রায়েড রাইস, পোলাও থাকত। কিন্তু মানুষের স্বাদ বদলের কারণে খাদ্যভাসেরও কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। এখন অনেকেই বাজার থেকে বিরিয়ানি কিনে বাড়ি ফিরছেন। তাই বিরিয়ানিতে মজা বাঙালির বিয়ে বাড়ির মেনুতেও বিরিয়ানি রাখা হচ্ছে।
বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের ক্যাটারার সংস্থার কর্মকর্তা প্রদীপ সরকার বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক থেকে বিয়ে বাড়িতে অন্য মেনুর সঙ্গে বিরিয়ানি রাখার পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। এ মাসে ২৮টি বিয়ে বাড়িতে কাজ করার বরাত আমরা পেয়েছি। তার মধ্যে ১৪টি বিয়ে বাড়িতে অন্য মেনুর সঙ্গে বিরিয়ানি, বুরানি, রাইতা, চিকেন চাপ, মটন চাপ রাখতে হয়েছে। আরও কয়েকটি বিয়ে বাড়ির মেনুতে বিরিয়ানি রাখার কথা রয়েছে।’’
জেলার ক্যাটারার সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, অগ্রহায়ণ মাসে বিয়ের একাধিক দিন রয়েছে। শীতকালে বিয়ে বাড়িতে নানা ধরনের মেনুর চাহিদা রয়েছে। ইলিশ ভাপা, ইলিশ পোস্ত, চিতল মাছের ঝাল, ভেটকি মাছের ভাপা, মাটন কসা, মাটন চাপ, মটন কোরমা, কাশ্মীরি আলুর দম। পোলাও, ফ্রায়েড রাইসতো রয়েছে। সেই সঙ্গে চিকেন রেজালা, মাটন রেজালা, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান, মটরশুঁটির কচুরি বা নান রুটি। অসময়ের এঁচড় কোফতা, অসময়ের আনারসের চাটনি, অসময়ের কাঁচা আমের চাটনি, রোস্টেড পাঁপড়।
মিষ্টির মধ্যে বেকড রাজভোগ, বেকড মিহিদানা, হট গোপালজামুন, মালাই রসগোল্লা, ক্ষির। নিরামিষভোজিদের কথা মাথায় রেখে বিয়ে বাড়ির মেনুতে রাখা হচ্ছে মেথি পনির, পনির পছন্দ, পালং পনির, ছানার ডালনা, ধোকার ডালনা রাখা হচ্ছে মেনুতে।
এক সময় গ্রামীণ এলাকায় খেজুর পাতার চাটাই পেতে কলাপাতায় ভাজা, ভাত, ডাল, পাঁচ আনাজের তরকারি, মাংস দিয়ে বিয়ের ভোজ হত। শেষ পাতে পড়ত দই মিষ্টি। ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন হয়েছে। ধীরে ধীরে চাটাইয়ের বদল এল, বেঞ্চ চেয়ারে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা শুরু হল। এখন চেয়ার টেবিল পেতে বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে।
শহর ছাড়িয়ে মুর্শিদাবাদের লালগোলা, কান্দি, সাগরদিঘি, ফরাক্কার মতো জায়গায় হাতে গোনা হলেও ‘বুফে’ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছে। ক্যাটারার সংস্থার কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন শহরের সংস্কৃতি গ্রামীণ এলাকায় ক্রমে ঢুকছে। ফলে দ্রুত গ্রামীণ একালাকায়ও বুফে খাওয়ার চল শুরু হয়ে যাবে। লালগোলার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর মিঞা বলছেন, ‘‘বছর কুড়ি আগেও খেজুর পাতার চাটাইয়ে পাত পেড়ে কলাপাতায় বিয়ে বাড়ির ভোজ খেয়েছি। এই ক’বছরে দেখলাম খেজুর পাতার চাটাই ছেড়ে বেঞ্চ-চেয়ার, টেবিল-চেয়ার। এখন লালগোলার কিছু কিছু পরিবারের টেবিল চেয়ারে বসে খাওয়ানোর পাশাপাশি বুফে খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করছে।’’