বছর আড়াই আগে, ২০১৩ সালে, স্কুল পরিচালন সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে খুন হয়েছিলেন চাপড়ার সিপিএম সমর্থক আসাদুল শেখ।
বেশ কিছু সিপিএম সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেশ ক’টি বাড়িতে। পুড়ে গিয়েছিল আসাদুলের পরিবারের তিন মহিলাও। সে রাতেই ঘর ছেড়েছিলেন আসাদুলের দশ ভাই ও তাঁদের পরিবার। গ্রামে আর পেরা হয়নি তাঁদের।
চাপড়া, বাঙ্গালঝি, ছোট আন্দুলিয়া, হাঁটরা-সহ বিভিন্ন গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। কেউ বা নিয়েছেন বাড়ি ভাড়া। তাঁদের বিঘের পর বিঘে জমিতে এখন আগাছা, চাষ করার লোক নেই।
ভোট এলে সিপিএমের তরফে তাদের ঘরে ফেরানের একটা উদ্যোগ দেখা যায়। তার পর আবার সব চুপচাপ। জমি-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ওই সব পরিবারগুলির কাউকে পরের জমিতে মজুরের কাজ করতে হয়। কেউ আবার ফেরিওয়ালার পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ পাড়ি দিয়েছেন ভিন রাজ্যে।
প্রতিবার ভোটে জয় পরাজয় হয়। কিন্তু এই মানুষ গুলোর আর দিন ফেরে না। এ বার ভোট পর্ব মিটে যাওয়ার পরও একই ছবি। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, ‘‘যদি আমাদের দলের কারও ঔদ্ধত্যের কারনে ঘরে ফেরা আটকে থাকে, তাহলে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করে দেব।’’
একই কথা বলেছেন শাসক দলের বিদায়ী মন্ত্রী তথা কৃষ্ণনগর (দক্ষিণ) কেন্দ্র বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের আমলে ওই সব গ্রামে চরম অবস্থা ছিল। ওদের সন্ত্রাসে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এখন সেই পরিবেশ নেই। এখন শান্ত।’’ কিন্তু বেশ কিছু পরিবার যে ঘর ছাড়া? তিনি বলেন, ‘‘সেটা সিপিএমে করে রেখেছে। ওদের স্বার্থে মানুষ গুলোকে ভুল বুঝিয়ে গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরাও চাই মানুষ গুলো ঘরে ফিরুক।’’ নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরে একই সুরে গাইছেন চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমানও।
তিনি বলেন,‘‘ওই মানুষ গুলো কোনও দিনই আমার কাছে আসেন নি। চাপড়ায় আমার দরজা সকলের জন্য খোলা। আমার কাছে এলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের ঘরে ফেরাবো।’’ কিন্তু সত্যিই সেটা সম্ভব?
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা চাপড়ার প্রার্থী সামশুল ইসলাম মোল্লা বলেন,‘‘তৃণমূলের নেতার মুখে যাই বলুন না কেন তারা যে ওই পরিবার গুলিকে ঘরে ফেরাতে চাইছেন না তার একাধিক প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। মানুষ এসব বিশ্বাস করবে না।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই ওই পরিবার গুলে যে কোন মূল্যে বাড়ি ফিরুন। নিরাপদে বাঁচুন।’’ সবাই চাইছেন। কিন্তু তারা কি আদৌ কোনও দিন গ্রামে ফিরতে পারবেন?