হাতে লিফলেট নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরছেন সিপিএমের এক প্রাক্তন বিধায়ক। গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি প্রার্থীও হয়েছিলেন। দলের ‘জনসংযোগ ও অর্থ সংগ্রহ’ কর্মসূচিতে তাঁকে দেখে মাঝবয়সি এক জন কিছুটা অনুযোগের সুরে বলে উঠলেন, “দু’বছর পরে আপনাকে দেখলাম এলাকায়।”
বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন দলের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-ও। প্রশ্ন ছুটে এল, “আপনারা যে বলছেন গ্যাস ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন করছেন, কই আমরা তো জানতে পারছি না!”
ভোটের পর ভোটে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে সিপিএম। অথচ বহু সময়েই দেখা যাচ্ছে, নানা কর্মসূচিতে রাস্তায় নামলে তাঁরা বহু মানুষকেই সঙ্গে পাচ্ছেন। সিপিএম কর্মীদের দাবি, সম্প্রতি সিঙ্গুর থেকে রাজভবন পর্যন্ত পদযাত্রায় তা আবার প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। নদিয়া জেলা নেতাদের মতে, “এর পরেও ভোটে এই সমর্থন প্রতিফলিত হচ্ছে না।” কেন? তা জানতেই দোরে-দোরে ঘুরে মানুষের মন পড়তে চাইছেন তাঁরা।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের জনসংযোগ ও অর্থ সংগ্রহ কর্মসূচি। তা চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জেলা সম্পাদক থেকে শুরু করে দলের একেবারে সাধারণ সদস্য সকলকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিলি করে অর্থ সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে দলের যে স্তরের নেতাই হোন, ঘরে বসে থাকা চলবে না। জেলা কমিটির সমস্ত সদস্যকে বলে দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম পাঁচটি করে বুথে দলের কর্মীদের নিয়ে বাড়ি-বাড়ি ঘুরতে হবে। কথা বলতে হবে মানুষের সঙ্গে। নদিয়া জেলায় ৩৩টি এরিয়া কমিটি। তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই ক’দিনে এলাকার অন্তত ৫০ শতাংশ বুথের ৫০ শতাংশ পরিবারের কাছে পৌঁছতেই হবে। পৌঁছতে হবে সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের কাছে। অর্থ সংগ্রহের জন্য ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার কুপন ছাপানো হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি এরিয়া কমিটিতে অন্তত এক লক্ষ টাকা করে সংগ্রহ করতে হবে। তা থেকে ৩৩টি এরিয়া কমিটি মিলে জেলা কমিটির হাতে তুলে দেবে দু’লক্ষ টাকা।
যদিও নেতারা বলছেন, অর্থ সংগ্রহটা উপলক্ষ মাত্র। আসল লক্ষ্য, এটাকে সামনে রেখে মানুষের মনের কথা জানার চেষ্টা। আর সেটা করতে গিয়েই নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। দিতে হচ্ছে জবাবদিহি। কৃষ্ণনগর শহরের এক এরিয়া কমিটির সদস্যের কথায়, “অনেকে তো সরাসরি বলেই দিচ্ছেন যে আমরা রাস্তায় নেই বলেই তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলকে হটাতে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।”
কৃষ্ণনগর-১ এরিয়া কমিটির সদস্য প্রবীর মিত্র বলছেন, “মানুষ জানতে চাইছে কেন আমাদের সে ভাবে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। আমাদের তাঁরা আরও বেশি করে রাস্তায় দেখতে চাইছেন।” জেলা সম্পাদক বলেন, “অনেকেই আমাদের কাছে তাঁদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সমালোচনাকে আমরা পরামর্শ হিসাবেই নিচ্ছি।”