জঙ্গিপুর

বিধানসভা জুজুতে সিপিএম রুখল আরএসপিকে

বামফ্রন্টের নীতি মানছে না সিপিএম—এই অভিযোগে সুর চড়িয়েও কয়েক কদম পিছিয়ে গেল আরএসপি। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বিধানসভা ভোটের দিকে চেয়েই এই পিছিয়ে আসা। আরএসপি-র সেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিপুর পুরসভার পুরপ্রধান এবং উপপুরপ্রধান, দুই পদই ‘দখলে’ রাখল সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৫ ০০:২৪
Share:

বামফ্রন্টের নীতি মানছে না সিপিএম—এই অভিযোগে সুর চড়িয়েও কয়েক কদম পিছিয়ে গেল আরএসপি। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, বিধানসভা ভোটের দিকে চেয়েই এই পিছিয়ে আসা। আরএসপি-র সেই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাকে কৌশলে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিপুর পুরসভার পুরপ্রধান এবং উপপুরপ্রধান, দুই পদই ‘দখলে’ রাখল সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

সোমবার প্রত্যাশিত ভাবেই জঙ্গিপুর পুরসভায় বোর্ড গঠন করে বামফ্রন্ট। ২১ সদস্যের পুরসভায় বাম সদস্য রয়েছেন ১৪ জন। কংগ্রেসের ৫ জন, এসইউসি ও বিজেপির ১ জন করে সদস্য রয়েছেন। এ দিনের সভায় হাজির ছিলেন প্রত্যেক সদস্যই। এ দিন পুরপ্রধান পদে বামেদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস বা বিরোধী কোনও দলের কোনও প্রার্থী না থাকায় বিনা বাধায় সভা শুরুর মিনিট পনেরোর মধ্যেই পুরপ্রধান পদে পুনর্নির্বাচিত হন বিদায়ী পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম। শপথ গ্রহণের পরেই তিনি উপ পুরপ্রধান হিসেবে সিপিএমের সুবীর রায়ের নাম ঘোষণা করেন। পুরসভার পাশে মঞ্চ বেঁধে সভা করে বিজয়ী বাম প্রার্থীদের সংবর্ধনা জানানো হয়।

এই সভায় জঙ্গিপুরের প্রাক্তন আরএসপি বিধায়ক আবুল হাসনাত হাজির থাকলেও পুর এলাকার দায়িত্বে থাকা ক্ষুব্ধ আরএসপি নেতা প্রদীপ নন্দী হাজির হননি। প্রদীপবাবু ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘উপ পুরপ্রধান পদ সিপিএম নেবে এই সিদ্ধান্ত সিপিএমের চাপিয়ে দেওয়া। এর সঙ্গে একমত নই।’’ তিনি জানান, বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তই রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ শরিক দল পুরপ্রধান পদ পাবে এবং ছোট শরিক পাবে উপপ্রধান পদ। জঙ্গিপুর পুরসভায় সিপিএম তা না মেনে দুটি পদই দাবি করে। বামফ্রন্টের সভায় তার প্রতিবাদও করা হয়। কিন্তু সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য কোনও ভাবেই মানেননি বলে প্রদীপবাবুর অভিযোগ।

Advertisement

কেন এমনটা হল? সিপিএমের তরফে যুক্তি, উপপুরপ্রধান পদ আরএসপিকে ছেড়ে দিলে দুই পদাধিকারীই জঙ্গিপুর শহর থেকে নির্বাচিত হবেন। তার প্রতিক্রিয়া খারাপ হবে। আরএসপি-র তরফে প্রদীপবাবুর পাল্টা যুক্তি, ‘‘তাই যদি হয় তবে আগে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে জিতে মৃগাঙ্কবাবু পুরপ্রধান এবং ২০ নম্বর থেকে জিতে জুলিবিবি উপপুরপ্রধান পদ পেয়েছিলেন কী ভাবে?’’ আরএসপি-র একটি সূত্রে খবর, সিপিএমের এই দখলদারি মনোভাবে দলীয় কর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।

একই ভাবে ক্ষোভ উগড়েছেন আরএসপি-র জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সুতির প্রাক্তন বিধায়ক জানে আলম মিয়াঁ। তাঁর কথায়, ছোট শরিককে উপেক্ষার এই প্রবণতা নতুন নয়। বড় শরিক হিসেবে সিপিএমের উচিত বামফ্রন্টের ঘোষিত নীতি অনুসরণ করা। তা না করে শরিক দলের উপরে জোর করে তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে সিপিএম। শিলিগুড়িতে ১ জন মাত্র কাউন্সিলার আরএসপি-র। সেখানেও ওই সদস্যকে ডেপুটি মেয়র করা হয়েছে। বামফ্রন্টের নীতি শিলিগুড়ি, কলকাতা, জঙ্গিপুরে একেক রকম হতে পারে না!

দলের কিছু নেতা যে বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন তার উল্লেখ করে জানে আলমের কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কীসের ভয়? আরএসপির ২টি আসন রয়েছে জঙ্গিপুর ও সুতিতে। বড় শরিক হিসেবে সিপিএম কালই যদি বলে ওই আসন দুটি তাদের ছেড়ে দিতে হবে, সেটাই হয়ত মেনে নেবে দল।’’ জঙ্গিপুর পুরসভায় এই ঘটনা খারাপ নজির হয়ে রইল বলে তাঁর মত।

রঘুনাথগঞ্জের আরএসপি-র প্রাক্তন বিধায়ক আবুল হাসনাত অবশ্য কিছুটা নরম সুরেই কথা বলছেন। পরিস্থিতির চাপে এই সিদ্ধান্ত মানতে হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘‘দলে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবাই যে একমত তা নয়। কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে। তাকে সব সময় উপেক্ষা করা যায় না। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।’’

দলের এক নেতা অবশ্য মেনেছেন সার কথাটি। তাঁর কথায়, দলের সাংগঠনিক অবস্থা এ জেলায় ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। দলের কেউ কেউ চাইছেন বিধানসভা আসন ফিরে পেতে। সেই বিধানসভার জুজুতেই বড় শরিকের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে।

সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আরএসপি-র জেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ ফোন না ধরায় প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি আরএসপির জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement