সংগঠনকে ‘সক্রিয়’ করতে দলের ‘নিষ্ক্রিয়’ কর্মীদের তালিকা তৈরি করছে সিপিএম। সেই কর্মীদের সতর্ক করে নজর রাখা হবে তাঁদের কাজকর্মের উপরে। তারপরেও কোনও পরিবর্তন না হলে তাঁদের দায়িত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কেড়ে নেওয়া হতে পারে দলের সদস্যপদও।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন লোকাল কমিটি থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যদের তালিকা জোনাল কমিটির মাধ্যমে জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সেই তালিকায় আছেন শাখা কমিটির সদস্য, সম্পাদক, লোকাল ও জোনাল কমিটির সদস্যরাও। সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘নিষ্ক্রিয় কমরেডদের আমরা সংশোধিত হওয়ার সুযোগ দেব। কিন্তু তার পরেও যাঁরা সংশোধিত হবেন না তাঁদের সদস্যপদ খারিজ হতে পারে। আমরা চাই সক্রিয় ও লড়াকু সদস্যদের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে।” এই মুহূর্তে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন যে, শুধু কর্মসূচি গ্রহণ করলেই হবে না। তা বাস্তবে রূপায়ণ করতে হবে। আর সেই জন্যই প্রয়োজন ‘সিরিয়াস’ নেতা-কর্মীর। তাঁদের যুক্তি, সক্রিয় সদস্য বাড়ালে তবেই দলের সক্রিয়তা বাড়বে।
লোকসভা ভোটের পরে থেকেই নানা সভায় ও আলোচনায় এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সিপিএম নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠেছিল, যাঁরা সক্রিয় নন তাঁদেরকে কেন রাখা হবে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে? তবে এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে দল। লোকসভা ভোটের পরে সূর্যকান্ত মিশ্রের উপস্থিতিতে জেলা কমিটির বৈঠকেও দাবি উঠেছিল, এই কঠিন সময়ের মধ্যে যাঁরা রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাঁদের তুলে আনতে হবে। সেই সঙ্গে যাঁরা নানা কারণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারছেন না তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। একই দাবি উঠেছিল দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সম্মেলনেও। তারপরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে জেলা কমিটির সদস্য তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য খবিরুদ্দিন আহমেদ শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে জেলা কমিটি থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নয়ন সরকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলেও দল সে আবেদন মঞ্জুর করেনি। জেলা নেতৃত্বের দাবি, হাঁসখালি এলাকায় নয়নবাবুর বিকল্প নেতৃত্ব এখনও উঠে আসেনি। তবে এরই মধ্যে নতুন প্রজন্মের দু’জন, কল্যানী- ৩ নম্বর লোকাল কমিটির সদস্য সোমেশ কংশবণিক ও কালীগঞ্জের মীরা লোকাল কমিটির নশরোতুল্লা শেখকে জেলা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। আবার অনেককে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় নতুন সক্রিয় সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নদিয়া জেলায় এই মুহূর্তে দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯৫০০ জন। শাখা কমিটির সংখ্যা ৮২৭টি। লোকাল কমিটির সংখ্যা ৭১টি ও জোনাল কমিটির সংখ্যা ১৪টি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন জোনাল কমিটি থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যদের যে তালিকা এসেছে তার সংখ্যা প্রায় ১২০০ জন। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, “এখনও কিন্তু সব কমিটি থেকে সম্পূণর্র্ তালিকা আসেনি। ফলে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।” দলীয় সূত্রে খবর, এই তালিকায় লোকাল কমিটির সদস্য আছেন প্রায় শতাধিক। আর জোনাল কমিটির সদস্য আছেন প্রায় ২৫ জন। তবে জেলা কমিটির কোনও সদস্য এখনও পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় বলে চিহ্নিত হননি। সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্যের দাবি, “আমাদের দলের প্রায় ৯৭ শতাংশ সদস্য বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পরে দলে যোগ দিয়েছেন। ফলে তাঁদের প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করার অভিজ্ঞতা নেই। তাঁদের অনেকেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের সামনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া কর্মীদের পেশাগত অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক উপলব্ধির অভাব এ সবও কোন কোন কর্মীকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।”
তবে ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যরা অবশ্য নিজেদের স্বপক্ষে নানা অজুহাত খাড়া করছেন। নিষ্ক্রিয়দের তালিকায় নাম থাকা এক লোকাল কমিটির সদস্য বলছেন, “এটা ঠিক যে, শারীরিক কারণেই আমি আর আগের মতো সক্রিয় ভাবে দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারি না। তবে এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শাসক দলের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার মতো নেতৃত্বও কি এই মুহূর্তে আমাদের দলে আছে? কার ভরসায় কর্মীরা রাস্তায় নামবেন? তাছাড়া নিয়ম যদি সকলের ক্ষেত্রে সমান হয় তাহলে তো আমাদের মতো নিষ্ক্রিয় সদস্যের তালিকায় জেলা তো বটেই, রাজ্যেরও বহু নেতার নাম থাকা উচিত। সেটা কি থাকবে?”
যদিও ‘নিষ্ক্রিয়’ সদস্যেদের কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ জেলা নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, আগামী জানুয়ারি মাসের দলের জেলা সম্মেলনের আগেই নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে দেওয়া হবে।