জলঙ্গি-রানিনগরে গরু পাচার চলছেই

আংড়াইল সীমান্তে গরু পাচার কমে আসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যখন সন্তোষ প্রকাশ করছেন, ঠিক তখনই জলঙ্গি সীমান্তে নতুন করে পাচার শুরুর অভিযোগ শুনে এলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কিছু দিন আগেও যে উত্তর ২৪ পরগনার আংড়াইল সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার করা হত বাংলাদেশে, প্রশাসন সক্রিয় হওয়ায় তাতে ইদানীং ভাটা পড়েছে। বুধবার ওই এলাকার মানুষই তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু এক রাস্তা বন্ধ হতে না হতেই আর এক রাস্তা খুলে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদে জলঙ্গি ও রানিনগর সীমান্ত হয়ে উঠেছে গরু পাচারের বড় করিডর।

Advertisement

সুজাউদ্দিন

ডোমকল শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
Share:

আংড়াইল সীমান্তে গরু পাচার কমে আসায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যখন সন্তোষ প্রকাশ করছেন, ঠিক তখনই জলঙ্গি সীমান্তে নতুন করে পাচার শুরুর অভিযোগ শুনে এলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।

Advertisement

কিছু দিন আগেও যে উত্তর ২৪ পরগনার আংড়াইল সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার করা হত বাংলাদেশে, প্রশাসন সক্রিয় হওয়ায় তাতে ইদানীং ভাটা পড়েছে। বুধবার ওই এলাকার মানুষই তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কিন্তু এক রাস্তা বন্ধ হতে না হতেই আর এক রাস্তা খুলে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদে জলঙ্গি ও রানিনগর সীমান্ত হয়ে উঠেছে গরু পাচারের বড় করিডর।

বাংলাদেশ থেকে বিএসএফ মারফত মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রানিনগর ও জলঙ্গি সীমান্ত দিয়ে মোট ১৭৯টা গরু পাচার হয়েছিল। সেখানে এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ৪৫৯০টি গরু পাচার হয়েছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।

Advertisement

পাচারকে কেন্দ্র করে বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে বুধবারই জলঙ্গির সরকারপাড়া গ্রামে যান বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সহ-সভাপতি প্রভাকর তিওয়ারি, জেলা বিজেপি সভাপতি মালা ভট্টাচার্য ও বিজেপি জেলা যুব মোর্চা সভাপতি শাখারভ সরকারেরা। তাঁরা শুনে এসেছেন, পরিস্থি্তি কতটা সঙ্গীন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে সীমান্তের মাঠ দিয়ে পালে-পালে গরু যাওয়ায় পাকা ফসল নষ্ট হচ্ছে। বিএসএফের কাছে এই নিয়ে অভিযোগ করায় পাচারকারীরা খেপে গিয়ে লুঠ থেকে বাড়ি ভাঙচুর— কিছু বাদ রাখেনি। এমনকী মহিলাদের উপরেও আক্রম‌ণ চালিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, জঙ্গিপুরের আহিরণ এবং কাটাখালি পোস্ট দিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে পাচার শুরু হয়। তাতে কিছুটা সফল হয়েই ডোমকলের জলঙ্গি ও রানিনগরকে বেছে নেওয়া হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কখনও বিএসএফের সহযোগিতায়, কখনও তাদের ফাঁকি দিয়ে চলছে পাচার। প্রায় সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ডোমকলের ধুলাউড়ি এবং নদিয়ার থানারপাড়ায় সাহেবপাড়া ঘাটে ট্রাক থেকে গরু নামে। সেখান থেকে গরুর পালকে সীমান্তের দিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে রাস্তা পাহারা দেয় পাচারকারীরা।

দু’মাসে জলঙ্গি সীমান্তে কিছু ঘটনাও ঘটেছে। বাইনোকুলার চুরি হয়েছে বিএসএফ-এর, বিএসএফ জওয়ান জখম পাচারকারীদের হাতে, সংগঠিত ভাবে বোমাবাজি করে পাচার চলেছে। পাচারকারীদের গোষ্ঠী সংঘাতে গ্রামেও বাধছে গণ্ডগোল।

তবে বাম আমলেও মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার হতো। রানিনগর সীমান্তের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘‘তখন পাচারকারীদের দাপটে চলাফেরা দায় হয়েছিল।’’ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে নজরদারি বাড়ে। পরিস্থিতি বদলায়। কিন্তু এখন আবার যে-কে-সেই। বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সভাপতি শাখারভ সরকারের মতে, এক সময়ে রাজ্যের শাসক সিপিএম এবং স্থানীয় ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের দলীয় তহবিল এই পাচারের টাকায় মজবুত হতো। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে সেই টাকার উৎস বন্ধ করতে পাচার আটকায়। তাঁর অভি়যোগ, ‘‘এখন জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ ও পুলিশের মদতে ফের পাচার হচ্ছে।’’ তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেনের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কিছু পাচারকারীকে নিয়ে বিজেপি সংগঠন তৈরির চেষ্টা করছে। ফল না হওয়ায় পাগলের প্রলাপ বকছে।’’

জলঙ্গি ব্লক কংগ্রেস নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘পাচার চললে কাঁচা টাকার দৌলতে অসামাজিক কাজ মাথাচাড়া দেয়।’’ এ জন্য জেলা পুলিশের ঢিলেঢালা মনোভাবকেও দুষছেন এলাকার মানুষ। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর অবশ্য বলেন, ‘‘গত চার মাসে এক হাজার গরু ও জনা ষাটেক পাচারকারীকে আটক করেছি। আগামী দিনেও অভিযান চলবে।’’ বিজেপির জয় বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এই আশ্বাসে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোটা বিষয়টির সঙ্গে তো পুলিশ নিজেই জড়িয়ে। তারা কাজের কাজ কিছুই করছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement